‘খালেদার নিবন্ধ রাষ্ট্রদ্রোহসম’

গণতন্ত্র ‘রক্ষায়’ বিদেশি ‘হস্তক্ষেপ’ চেয়ে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রদ্রোহমূলক ‘অপরাধ’ করেছেন বলে দাবি করেছেন সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2013, 10:26 AM
Updated : 31 Jan 2013, 10:26 AM

ওয়াশিংটন টাইমসের মতামত পাতায় প্রকাশিত বিরোধীদলীয় নেতার লেখা নিয়ে বৃহস্পতিবার সংসদে সমালোচনায় ফেটে পড়েন তারা।

বাংলাদেশ গণতন্ত্রের বদলে একটি পরিবারের শাসনে যাচ্ছে আশঙ্কা প্রকাশ করে বুধবার প্রকাশিত ওই নিবন্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয়তা প্রত্যাশা করেছেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এই নিবন্ধের সমালোচনা করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, দীপু মনি, বেবী মওদুদ প্রমুখ।

ওই নিবন্ধের বক্তব্যের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতেও খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান তারা।

আলোচনার সূত্রপাত করে শেখ সেলিম বলেন, বিদেশি ‘হস্তক্ষেপ’ চাওয়া প্রমাণ করে বিরোধীদলীয় নেতার পায়ের নিচে মাটি নেই।

“তিনি (খালেদা জিয়া) সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। এটা গভীর ষড়যন্ত্র। এ ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।”

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে বিদেশিদের কাছে অভিযোগ দেয়ার সমালোচনাও করেন সেলিম।

“ওবামার কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সিদ্ধান্ত কে দেবে? ওবামা নাকি এ দেশের জনগণ?”

র‌্যাবকে নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম বলেন, প্রতিষ্ঠিত এই বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “একাত্তরে পাকিস্তানিরা যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছিল; এখনো একই প্রতিধ্বনি খালেদা জিয়ার মুখে।

“বিরোধীদলীয় নেতার প্রকাশ্যে এ ধরনের চিঠি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ। এ অপরাধ তাকে মোকাবেলা করতে হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাওয়া জিএসপি ও শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিলের জন্যই খালেদা জিয়ার এই প্রয়াস বলে মনে করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “দেশের স্বার্থবিরোধী এ ধরনের নিবন্ধ শত্রুতা ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশের কোনো নাগরিক এ ধরনের বিবৃতি দিতে পারে, তা আমি চিন্তাও করতে পারি না।”

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “কী করে একটি দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আরেক দেশকে বলতে পারেন! যার মধ্যে ন্যূনতম দেশাত্মবোধ রয়েছে, তিনি এ কাজ করতে পারেন না।”

যুক্তরাষ্ট্রকে খালেদা জিয়া ভুল বোঝাতে চেষ্টা করতে পারেন বলেও মনে করেন তিনি।

পাটমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী সংসদীয় পদ্ধতিতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

“বিদেশে তার প্রভু আছে, তার প্রমাণ তিনি দিলেন। নিন্দা প্রস্তাব সংসদে গ্রহণ করা হোক।”

মতিয়া চৌধুরী বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনি চুপ থাকেন। চুপ থাকলে দেশের মানুষ আপনাকে বুদ্ধিমতি ভাবে।”

ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা মুক্তিযুদ্ধের কথা স্বীকার করেননি। অথচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বিরোধী দলের নেতাদের ‘দমনের বিচার’ বলে উল্লেখ করেছেন।

“বাইরের হস্তক্ষেপ দিয়ে দেশের গণতন্ত্র রক্ষা হয় না। বিরোধীদলীয় নেতাকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”

একাত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরে বেবী মওদুদ বলেন, “তিনি (খালেদা জিয়া) কি আশা করেছিলেন- একাত্তরের মতো সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ তাদের হাতে তুলে দেবেন?”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “আমার দেশ কীভাবে চলবে, সংবিধান কী হবে- তা বন্ধু রাষ্ট্র কেবল পরামর্শ দিতে পারে। বিধান কী হবে- তা ঠিক করে দেয়ার অধিকার কারো নেই।”

জাসদের মইনুদ্দিন খান বাদল, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, আওয়ামী লীগের আবদুল মতিন খসরু, শিরিন শারমিন চৌধুরী, তারানা হালিম, অপু উকিল, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, নাজমা আক্তার, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, আবদুর রহমান এই আলোচনায় অংশ নেন।

ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা বক্তব্য দেয়ার পর ‘কিছু অসংসদীয় বক্তব্য’ এক্সপাঞ্জ করার সুপারিশ করেন হুইপ আ স ম ফিরোজ।

অনির্ধারিত এ আলোচনা চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। দীর্ঘ এই আলোচনার কারণে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা এদিন আর হয়নি।