রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি জাতীয় স্বার্থ বিরোধী: বিএনপি

কমিশন পাওয়ার লোভে সরকার রাশিয়ার সঙ্গে ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণচুক্তি করেছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2013, 09:13 AM
Updated : 18 Jan 2013, 09:13 AM

আধুনিক সমরাস্ত্র কেনা এবং পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে এই ঋণচুক্তি করে সরকার। এ চুক্তি জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী বলেও মনে করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

শুক্রবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “জাতীয় সংসদে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়া সরকার একতরফাভাবে রাশিয়ার সঙ্গে ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণচুক্তি করেছে।”

উচ্চ সুদের কঠোর শর্তে এসব ঋণ চুক্তি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মওদুদ বলেন, “এই ঋণের বোঝা দেশের ১৬ কোটি মানুষই কেবল বহন করবে না, দেশের জনসংখ্যা যখন ২০ কোটি হবে তখনও ওই ঋণের বোঝা জনসাধারণকে বহন করতে হবে। জাতীয় স্বার্থবিরোধী এ ধরনের ঋণ চুক্তির আমরা নিন্দা জানাচ্ছি।”

গত মঙ্গলবার মস্কোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের পর সমরাস্ত্র কেনা ও পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা (১৫০ কোটি মার্কিন ডলার) পেতে তিনটি ঋণ চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সেনা ও বিমান বাহিনীর সমরাস্ত্র কেনার জন্য প্রায় আট হাজার কোটি ঋণ নেয়া হবে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আরও চার হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়া হবে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সব অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি রাশিয়া থেকে কিনতে হবে।

গত সোমবার চার দিনের সফরে শেখ হাসিনা রাশিয়া যান। তার এই সফরে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে তিনটি ঋণ মুক্তি ও ৬টি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গণতান্ত্রিক উন্নয়ন ফোরামের উদ্যোগে গণতন্ত্রের শাসন সুরক্ষায় করণীয় শীর্ষক এই আলোচনা সভায় রাশিয়ার সঙ্গে করা ঋণচুক্তির কঠোর সমালোচনা করে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ।

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এরকম ঋণচুক্তির সঙ্গে দুর্নীতি সম্পৃক্ত থাকে। কমিশন পাওয়া যায়। আজ সেজন্য বড় কমিশন আসবে, লোভ সামলাতে না পেরে এরকম দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি করা হয়েছে।”

১২ হাজার কোটি টাকার শতকরা ১০ ভাগ কমিশনের হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, “১০ পারসেন্টে কমিশন আসে ১ হাজার দুইশ কোটি টাকা।”

মওদুদ বলেন, “আমরা মনে করি- সরকার দুর্নীতি ও একদলীয় শাসনের ধারাবাহিকতা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে এরকম উচ্চ সুদে ঋণ চুক্তি করেছে। এর আগে তারা বাংলাদেশে ট্রানজিটের অবকাঠামো গড়ে তোলার কথা বলে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছে।”

তিনি বলেন, পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, দুর্নীতির দিক থেকে বর্তমান বিশ্বে রাশিয়া ২৬ ও বাংলাদেশ ২৮ এ অবস্থান করছে।

“আমরা এই দুটি দেশ দুর্নীতিতে কাছাকাছি আছি।”

পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে সাবেক শিল্পমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, “পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র খুবই ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প। জাপান এই প্রকল্প ইতিমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশে এরকম প্রকল্প করাটা অতি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এরকম চুক্তির আগে অবশ্যই সম্ভাব্যতা যাচাই ও পরিবেশগত দিকটা বিবেচনা করার প্রয়োজন ছিল।”

তাছাড়া পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়ার প্রযুক্তি পুরণো বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

রাশিয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অতীত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা জানি রাশিয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের পুরণো সর্ম্পক রয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মনি সিং ও ফরহাদ সাহেবের সহযোগিতায় ১৯৭৫ সালে এদেশে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। বর্তমান সরকার হয়ত সেই সম্পর্ক পুরুজ্জীবিত করতে চায়। এটা তাদের ব্যাপার। আমরা এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।”

“তাই বলে দেশের জন্য উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের মানুষের ওপর ঋণের বোঝা চাপানো হল।”

তিনি জানান, ২০০১ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সরকার সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় কঠিন শর্তে ১৩টি চুক্তি করেছিল।

“এ ধরনের চুক্তির আগে সংসদে অথবা ক্ষমতাসীন দলের ফোরামে এ বিষয়ে কথা বলা উচিৎ ছিল। সংসদে কথা বললে আমরা পরামর্শ দিতে পারতাম।”

সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. বোরহান উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে ট্যাক্স ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট এ কে এম নেছার উদ্দিন, তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এদিকে, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে এক নাগরিক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, “সরকার একদলীয়ভাবে দেশ শাসন করতে বিরোধী দলকে দমনের কঠোর নীতি অনুসরণ করছে। এজন্য তারা বিরোধী নেতা-কর্মীদের কারাগারে নিক্ষেপ করছে।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন তিনি।

সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাবেক সাংসদ হেলেন জেরিন খান, হৃদয় বাংলাদেশের সভাপতি মো. হানিফ, ছাত্র দলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ বক্তব্য দেন।