আফসার ভাবছেন তিনি, আশায় আছেন মেহেদীও

সাবেক প্রতিমন্ত্রী আফসার আহমদের দাবি, তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারের সদস্য হিসেবে কাপাসিয়ার মানুষ তাকেই চাইছেন। অন্যদিকে মমতাজউদ্দিন মেহেদীর ভাষ্য, ‘ক্লিন’ ইমেজের কারণে তিনিই মনোনয়ন পাওয়ার সবচেয়ে বড় দাবিদার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2012, 10:29 AM
Updated : 23 August 2012, 10:29 AM
আবুল হোসেন
গাজীপুর, অগাস্ট ২৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- তানজীম আহমেদ সোহেল তাজের পদত্যাগের ফলে শূন্য গাজীপুর-৪ আসনে নির্বাচনের ভাবনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন তার চাচা ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আফসার উদ্দিন আহমদ খান।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর দাবি, তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারের সদস্য হিসেবে এলাকার মানুষ তাকেই চাইছেন।
এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মমতাজউদ্দিন আহমদ মেহেদীও। তার দাবি, ‘ক্লিন’ ইমেজের কারণে তিনিই মনোনয়ন পাওয়ার সবচেয়ে বড় দাবিদার।
এই দুজনের বাইরে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুল আলম খান বেনু এবং কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোতাহার মোল্লাসহ ১০ জন।
মনোনয়নপ্রত্যাশী এতজন হওয়ায় নির্বাচনের সময় বিভেদ এড়াতে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নেওয়া হয়েছে বলে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন।
গাজীপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “গত ১১ অগাস্ট উপজেলা কমিটির সভায় মনোনয়ন প্রত্যাশী ১২ নেতার কাছ থেকে কথা আদায় করা হয়েছে, মনোনয়নের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেবেন।”
৩০ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণের দিন রেখে বৃহস্পতিবার গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। তবে গত রোজার মাসজুড়ে বিভিন্নভাবে জনসংযোগ করে গেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের ছেলে সোহেল তাজের পদত্যাগে অনুষ্ঠিত এই উপনির্বাচন বর্জন করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
ফলে বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সরকারি দলের মনোনয়ন পাওয়াই সংসদ সদস্য হওয়ার ছাড়পত্র পাওয়া বলে মনে করছেন প্রার্থী হতে ইচ্ছুক অনেকে। অবশ্য মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টি এই আসনে নিজেদেও প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে আছে।
এক সময়ের সংসদ সদস্য আফসার উদ্দিন প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এলাকার মানুষ চাচ্ছে আমি নির্বাচন করি। তাছাড়া পারিবারিক সিদ্ধান্তে আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন দেবে বলেও আশাবাদী।”
তাজউদ্দীন আহমদের এই ভাই ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। ওই সরকারে প্রতিমন্ত্রীও হন তিনি। তবে কয়েক মাসের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন, যা তার প্রার্থিতার জন্য নেতিবাচক বলে স্থানীয় অনেক নেতার মত।
এই বিষয়ে আফসার বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যাকে যতক্ষণ ইচ্ছে মন্ত্রী রাখবেন, আর যাকে ইচ্ছে বাদ দেবেন, এটা সম্পূর্ণ তার ব্যাপার। তৎকালে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকেই আমি সম্মান করেছি। সবারই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলা উচিৎ।”
ভাস্তে তানজীমের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মেহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাপাসিয়া আওয়ামী লীগে জোহরা তাজউদ্দীনের পর আমার অবস্থান। এলাকার মানুষও আমাকে ভালোবাসে। এলাকায় আমার ক্লিন ইমেজ রয়েছে। সে হিসেবে আমি মনোনয়নের সবচেয়ে বড় দাবিদার।”
তবে একইসঙ্গে দলের প্রতিও মেহেদীর সতর্কবার্তা, “প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে খেসারত দিতে হবে।”
স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম রূপকার তাজউদ্দীনের পরিবারের প্রতি কাপাসিয়ার মানুষের আস্থা অতীতে দেখা গেছে। যার ফলে তার ভাই-ছেলেকেও নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে পাঠিয়েছে এই এলাকার মানুষ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারের প্রতি কাপাসিয়ার মানুষের ভালবাসা এখনো অটুট। তাজউদ্দীনের পরিবার থেকেই প্রার্থী মনোনয়ন চাই আমরা।”
তবে এলাকায় কোনো আলোচনা না করে পদত্যাগ করায় তানজীমের প্রতি ক্ষোভও রয়েছে অনেকের। আর এতে তাজউদ্দীন পরিবারের প্রতি মানুষের আস্থায় চিড় ধরেছে বলেও মনে করেন অনেকে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহমুদুল আলম খান বেনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেই স্কুলজীবন থেকেই আমি রাজনীতি করি। আমি মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। আমার বিশ্বাস নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন।”
গত ১২ অগাস্ট নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের তফসিলের তারিখ ঘোষণা করার পর থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। নিজের সমর্থকদের নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে দোয়া চাইছেন। লিফলেট, ব্যানার, বিলবোর্ডে নিজের পরিচিতিও তুলে ধরছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে মাঠে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান মোল্লা, সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আমানত হোসেন খান, আওয়ামী লীগের মালয়শিয়া শাখার সভাপতি আলমগীর হোসেন, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মহিলা সংসদ সদস্য জাহানারা বেগম প্রমুখ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এমআই/২২২৫ ঘ.