সেই জজ মিয়া এখন বাড়িছাড়া

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ‘সাজানো’ মামলায় অভিযুক্ত জজ মিয়ার পরিবার এখন বাড়িছাড়া।

নোয়াখালী প্রতিনিধিআবু নাছের মঞ্জু, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2012, 10:01 PM
Updated : 8 Oct 2018, 06:25 AM

মামলায় পড়ে পৈত্রিক বাড়িঘর সবকিছু বিক্রি করে দিতে হয়েছে জজ মিয়াকে। মা আর ছোট বোনকে নিয়ে এখন থাকেন নারায়ণগঞ্জে। জজ মিয়া স্বল্প বেতনে চাকরি করেন ঢাকার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে।

নোয়াখালীর সেনবাগের কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট গ্রামের ছেলে জজ মিয়া। আলোচিত হলেও এলাকার কেউই এখন আর জজ মিয়ার পরিবারের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক কিছুই জানেন না।

জজ মিয়ার খোঁজে একটি মোবাইল নম্বরে ফোন করলে সেটি ধরেন তার ছোট বোন খোরশেদা আক্তার। তিনি জানান, অফিসের কাজে জজ মিয়া বাইরে রয়েছেন, কবে বাড়ি আসবেন তাও জানেন না।

খোরশেদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় চার বছর ধরে আমার ভাইকে মিথ্যা মামলায় হাজত খাটতে হয়েছে। এ মামলায় পড়ে পৈত্রিক বাড়িঘর সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে হয়েছে আমাদের। প্রথম দিকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাকে মাসে ২ হাজার করে টাকা দিত। পরে ছয় মাসের মাথায় তা বন্ধ করে দেয়।”

অসুস্থ মা আর বোনকে নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন জজ মিয়া।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলার কিছু দিন পরই আটক করা হয় জজ মিয়াকে।

তদন্ত সংস্থা সিআইডির পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, জজ মিয়া ওই হামলায় জড়িত, যদিও তখনই এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তদন্তে বেরিয়ে আসে, জজ মিয়াকে দিয়ে মামলা সাজানো হয়েছিল।

মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সিআইডির তিন তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আব্দুর রশিদ, এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। গ্রেনেড হামলার মূল মামলায়ও অভিযুক্ত হয়ে এখন কারাগারে তারা। অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে জজ মিয়াকে ঘিরে পুলিশ এগোলেও পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে বাদ দেওয়া হয় জজ মিয়াকে।

তবে মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও সামাজিকভাবে হেয় হয়ে নিজ এলাকায় আর স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হয়নি জজ মিয়ার।

বীরকোট গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জজ মিয়া দ্বিতীয়। বাবা মারা যাওয়ার পর সামান্য পুঁজি নিয়ে ঢাকায় ফলের ব্যবসা শুরু করেন জজ মিয়া, থাকতেন একটি মেসে। বাড়িতে থাকতেন বৃদ্ধ মা জোবেদা খাতুন আর ছোট বোন। সময় পেলেই জজ মিয়া তখন বাড়িতে আসতেন।

কেশারপাড় ইউনিয়ন পরিষদেও প্রাক্তন সদস্য ও ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জজ মিয়ার খবর এলাকার কেউ আর জানেন না। মোবাইলে ফোন করলেও তিনি ধরেন না।

২১ অগাস্টের ঘটনার ১০/১২ দিন আগেই বাড়ি আসেন জজ মিয়া। ঘটনার দিনও জজ মিয়া বাড়িতেই ছিলেন বলে জানান সাবেক এই ইউপি সদস্য।

“ওই দিন বিকেলে স্থানীয় কানকিরহাট বাজারে আমিসহ অনেকের সঙ্গে টেলিভিশনের খবর দেখেছিল জজ মিয়া। টেলিভিশনের খবর দেখেই আমরা জানতে পারি, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলার কথা।”

গোলাম মোস্তফা জানান, এর কয়েকদিন পরেই ঢাকা থেকে এলাকার একজন নেতার নির্দেশে সেনবাগ থানা পুলিশ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জজ মিয়ার খোঁজ-খবর নেন। ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারদের জজ মিয়াকে নজরদারিতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কয়েক দিন পর সেনবাগ থানা পুলিশ এসে জজ মিয়াকে ধরে নিয়ে যায়।