সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হচ্ছে না: সিইসি

আগামী সাধারণ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহার করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2012, 02:07 AM
Updated : 14 March 2015, 01:54 PM

ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ছয় মাস ধরে অনিশ্চয়তা চলার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ (সিইসি) রোববার কমিশনের এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “জাতীয় পর্যায়ে ইভিএম ব্যবহারের জন্য কমিশন প্রস্তুত নয়। এ জন্য আইন পরিবর্তন করতে হবে। তবে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করছি।”

আগামীতে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও পরীক্ষামূলকভাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করার পর চলতি বছর ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়। পরে এ প্রযুক্তি সফলভাবে ব্যবহার করা হয় নরসিংদী পৌর মেয়র নির্বাচনেও।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এর সবগুলো নির্বাচনেই ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে।

বিগত নির্বাচন কমিশন ও সরকার আগামী জাতীয় নির্বাচনে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিলেও গত ফেব্র“য়ারিতে কাজী রকিবউদ্দিন নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

গত কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনকে কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া বুয়েটের ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (আইআইসিটি) পরিচালক অধ্যাপক লুৎফুল কবীর গত মার্চে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন আসার পর ইভিএমের বিষয়টি ‘ভালোভাবে খেয়াল করছেন না’ বলেই তার মনে হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনাররা বিভিন্ন সময়ে ইভিএম নিয়ে ইসির দ্বিধার ইংগিত দিলেও রোববারই প্রথম সিইসি ঘোষণা দিলেন যে, জাতীয় নির্বাচনে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে তারা প্রস্তুত নন।

নতুন কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২৮ ফেব্র“য়ারি তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএমকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনে আবারও সংলাপের উদ্যোগ নেবে নির্বাচন কমিশন।”

এই সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “এ বিষয়ে ঈদের পরে আপনাদের জানানো হবে।”

আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দেশের ২০০ উপজেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, কেউ যাতে দ্বৈত ভোটার হতে না পারে সে বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে।

সিইসি জানান, ২০০৮-০৯ সালে করা তালিকায় এক লাখ ৯৬ হাজার দ্বৈত ভোটার ছিল।

“কেউ আইডি কার্ড হারিয়ে, কারো ঠিকানা পরিবর্তন হওয়ায় নতুন কার্ড করেছিলেন। কিন্তু অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন কার্ড করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নতুন করে ৩০ লাখ ভোটারের নিবন্ধন করা হয়েছে জানিয়ে কাজী রকিব বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ হবে বলে তারা আশা করছেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ তৈরি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “ঈদের পরে আপনাদের (সাংবাদিক) সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।”

উপজেলা নির্বাচন জাতীয় নির্বানের আগে না পরে হবে সে বিষয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আদালতের আদেশে এ নির্বাচন আটকে আছে। আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে; সব ঠিক থাকলে অক্টোবরে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করা হবে।

বর্তমান সংসদ রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য আইন সংশোধনের দরকার নেই বলেও মনে করেন নির্বাচন কমিশন প্রধান। তিনি বলেন, আইন সংস্কারের আগে বিধিগুলো সংস্কার করা হবে।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মোবারক বলেন, “জাতি পঞ্চদশ সংশোধনী মেনে নিয়েছে। কারণ এ নিয়ে কোনো মামলা হয়নি। তাই বর্তমান সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন হবে।”

“সংসদ চলাকালে নির্বাচন করতে আইনের কোনো পরিবর্তন করা লাগবে না। আইন অনুসরণ করেই কাজ করা হবে,” যোগ করেন এই কমিশনার।

সেক্ষেত্রে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোবরক পাল্টা প্রশ্ন করেন, “বর্তমান এমপিরাই যে মনোনয়ন জমা দেবেন তা কি করে আমরা জানব?”

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের তিন মাসে নতুন জাতীয় নির্বাচন হবে। আর এ নির্বাচন হবে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই।