সংলাপ‘ইসি নিয়োগে আইন প্রণয়নে আগ্রহী রাষ্ট্রপতি’

রাষ্ট্রপতিও নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে আইন প্রণয়নের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, প্রস্তাব পেলে তা সংসদে বিবেচনা করা যেতে পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2012, 00:49 AM
Updated : 28 Sept 2016, 10:56 AM

নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বসেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

বঙ্গভবনে ওই বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। এরপরও তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়েছেন।

“এটি শুভ উদ্যোগ। ইসি গঠন নিয়ে দেশের ইতিহাসে এ ধরনের উদ্যোগ আর নেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতি যে ইসি গঠন করবেন, যাকে নিয়োগ দেবেন- তারা সবার কাছে আস্থাশীল হবে।”

এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ মধ্য ফেব্র“য়ারিতে শেষ হচ্ছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ রয়েছে আরো দুই বছর।

আশরাফ বলেন, “বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ইসিও চলমান প্রক্রিয়ায় থাকবে। সরকারও চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। আগামী দুই বছরে সংসদের উপ নির্বাচন, স্থানীয় সরকারের উপ নির্বাচন, ঢাকা, গাজীপুর, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রয়েছে। এক্ষেত্রে ফেব্র“য়ারির মধ্যে ইসি নিয়োগ দিতে হবে।”

নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি যে প্রস্তাব দেবেন, তাতে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন থাকবে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

“আমরা সংলাপে রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাব দিয়েছি- রাষ্ট্রপতি যে প্রস্তাব তুলে ধরবেন, যে ইসি নিয়োগ করবেন, যাদেরকেই নিয়ে ইসি গঠন করবেন, তাতে আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন থাকবে।”

সিইসি ও ইসি নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন বা অন্য কোনো পদ্ধতির কথা আওয়ামী লীগ প্রস্তাব করেছে কি না জানতে চাইলে আশরাফ বলেন, এ ধরনের কিছু তারা জানাননি। রাষ্ট্রপতিও তাদের কাছে সিইসি বা কমিশনারদের নামের প্রস্তাব চাননি।

নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি আইন প্রণয়নের আগ্রহ দেখিয়েছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, “রাষ্ট্রপতি সংলাপে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের আভাস দিয়েছেন।”

এ বিষয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, “রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন বা আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিলে সংসদ তা বিবেচনা করবে। আমরা আশা করি, রাষ্ট্রপতি এমন কোনো প্রস্তাব দেবেন না যা সংসদে গ্রহণযোগ্য হবে না।”

আলোচ্যসূচির বাইরে অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা হয়নি জানিয়ে আশরাফ বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী ইসি গঠনের একক এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তিনি সবার গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন করবেন বলেই আশা করি।”

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বুধবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ‘এজেন্ডা বহির্ভূত’ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে মন্তব্য করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, “সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বা পক্ষে আলোচনা করার কোনো সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট এজেহুার ওপরে আমরা আলাপ করেছি।”

রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে সংলাপের উদ্যোগ নিলে আওয়ামী লীগ তাতে যোগ দেবে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “রাষ্ট্রপতির যে কোনো উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাব। এ নিয়ে সংলাপ হলেও আসবো।”

সরকার গত বছর সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর থেকেই আন্দোলন করে আসছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলটি বলছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হলে আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না।

বিএনপি চেয়ারপার্সন প্রধান খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েও এ কথাটিই আবার বলেছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “ফলপ্রসূ হবে না জেনেও আমরা সংলাপে অংশ নিয়েছি। উদ্দেশ্য একটাই, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি রাষ্ট্রপতিকে জানানো।”

নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিতে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ‘সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ও গুরুত্বপূর্ণ’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। এ ধারাবাহিকতায় ১২ দিন সংলাপে অংশ নিয়ে মোট ২৩টি দলের মতামত শুনেছেন রাষ্ট্রপতি।