সবিশেষকমিশনার নিয়োগে আইন চাইবে ইসি

নির্বাচন কমিশনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে আবারো 'নিয়োগ-পদ্ধতি আইন' প্রণয়নের সুপারিশ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি খসড়াও তৈরি করেছে কমিশন। জানাচ্ছেন মঈনুল হক চৌধুরী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2011, 11:07 PM
Updated : 3 June 2011, 11:07 PM
মঈনুল হক চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ঢাকা, জুন ০৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী করতে আবারো নিয়োগ-পদ্ধতি আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি খসড়াও তৈরি করেছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "কমিশনকে শক্তিশালী করতে বিতর্ক ছাড়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্যে প্রস্তাবিত নিয়োগ পদ্ধতিটি আইন আকারে পাস করা জরুরি।"
তিনি জানান, একজন নারীসহ তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সংবিধানের আলোকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ পদ্ধতি) আইন, ২০১১-এর খসড়া ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আসন্ন সংলাপে এ বিষয়েও মতামত চাইবে ইসি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দল, বিশিষ্টজন ও গণমাধ্যমের আমন্ত্রিতদের কাছে এই খসড়া পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছেও এ আইন করার সুপারিশ করে বর্তমান ইসি। কিন্তু তখন তা আমলে নেওয়া হয়নি।
আদালত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়ার পর ইসিকে শক্তিশালী করার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে আদালতের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার আর কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষে সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়মেই নির্বাচন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা হবে।
ইসিকের শক্তিশালী করার জন্য গত ৭ এপ্রিল সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির কাছে তিনটি প্রস্তাব পাঠায় কমিশন। একাধিক আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ রহিত করা এবং তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সুযোগ বন্ধের বিধি সংবিধানে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয় ইসির প্রস্তাবে।
বিশেষ কমিটির কো চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সে সময় বলেছিলেন, এ ধরনের বিষয়ের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই। কমিশন মনে করলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশেই এগুলো অন্তর্ভূক্ত করতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, "সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। কোনোভাবেই কমিশনকে সরকারের মুখাপেক্ষী হতে দেওয়া যাবে না।"
ইসিকে শক্তিশালী ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের রূপ দিতে আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়ারও সুপারিশ করেন নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন।
সার্চ কমিটি
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সম্ভাব্যদের একটি প্যানেল তৈরি করবে অনুসন্ধান কমিটির (সার্চ কমিটি)। ওই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিটি পদের বিপরীতে তিনজনের নাম প্রস্তাব করবে। পরে সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটি (সরকার ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে) তা পরীক্ষা করে বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে।
উপদেষ্টা কমিটির চূড়ান্ত প্যানেল থেকে যে কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
কার্যউপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ চূড়ান্ত হলে এ নিয়োগ নিয়ে আর বিতর্কের সুযোগ থাকবে পাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইসির প্রস্তাবে।
সিইসিকে আহ্বায়ক করে প্রধান বিচারপতি মনোনীত একজন বিচারক, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ও মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক- এই পাঁচজন নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে খসড়ায়।
অযোগ্যতা
সৎ বিবেচিত না হলে, বৈধ আয়ের ভিত্তিতে জীবন নির্বাহ না করলে, জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল বা অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হলে, রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচনের ইচ্ছে প্রকাশ করলে এবং তার প্রার্থিতা বিবেচনার তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে সাধারণ ঋণ গ্রহীতা, কোম্পানির পরিচালক বা অংশীদার হিসেবে ঋণ বা ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে থাকলে ওই ব্যক্তি সিইসি বা নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের অযোগ্য বিবেচিত হবেন বলে খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/জেকে/১১০০ ঘ.