বিএনপির টুকুর ভাষ্যে, এটা ‘কস্টলি লোড শেডিং’

সরকারের ‘ভুল’ নীতির কারণেই এখন বিদ্যুতে লোড শেডিং করতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2022, 06:16 PM
Updated : 18 July 2022, 06:16 PM

চাহিদার শতভাগ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনের পরও কেন লোড শেডিং ফিরল- এ প্রশ্ন তুলে সাবেক এ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, “আগে (বিএনপির আমলে) লোড শেডিং বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে, আর এখন মিউজিয়ামে যাওয়া লোড শেডিং আবার ফেরত আসতেছে। আগের লোড শেডিংয়ের জন্য জনগণকে পে করতে হয়নি, আর এখন মিউজিয়াম থেকে লোড শেডিং ফেরত এনে জনগণকে পে করতে হচ্ছে। সেটা হল সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

“কেন পে করতে হবে জনগণকে? লোড শেডিং, বিদ্যুৎও দেওয়া যাচ্ছে না, সাশ্রয় করা হচ্ছে। কিন্তু পেমেন্ট তো ঠিকই করে যাচ্ছি। এটাই সবার কাছে বড় প্রশ্ন।”

রাশিয়া--ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশেও বিদ্যুতের লোড শেডিং দেওয়াসহ ডলার সাশ্রয়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বৈঠকে অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, ভার্চুয়ালি অফিস করা, এসি ব্যবহারে সংযমী হওয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এর প্রতিক্রিয়ায় বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন ২০০১-২০০৬ সালের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকু।

তার ভাষায়, “বিদ্যুৎ প্রকল্পের আগে এর সাসটেইনিবিলিটি দেখতে হয়, যেসব পরীক্ষা করতে হয়, সেটা কিন্তু আমরা করি নাই। আমি বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট করছি, এই এই জ্বালানিগুলোর ওপর ভিত্তি করে করছি। এই জ্বালানিগুলো যদি কোনোদিন ওভার হয়ে যায়, তাহলে আমার ক্ষতি কতখানি হবে; লস অ্যাসেসমেন্ট তো আমরা করি নাই।

“বাহবা নিয়েছি, ঢোল পিটাইছি। (অ্যাসেসমেন্ট) না করার ফলে আমরা পড়ে গেছি। আজকে জনগণ তা ভোগ করছে। ইট ইজ জাস্ট বিকাম এ কস্টলি লোড শেডিং।”

চাহিদা না থাকলে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ নেওয়া হয় না, তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি গুনতে হয় সরকারকে, যা ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে পরিচিত। সেই খরচার কথাই বলেন টুকু।

তিনি বলেন, “সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করত, আজকে ক্যাপাসিটি চার্জ পেমেন্ট করতে হত না। আপনি বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না, আপনি তাদেরকে টাকা দিচ্ছেন। টাকাটা কার? টাকাটা আমার-আপনার, জনগণের। তাহলে কী দাঁড়াল? অন্ধকারে থাকলাম, আবার আমি পেমেন্টও করলাম, যেটা অতীতে দিতে হয়নি।”

সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকু বলেন, “সরকারের উচিত ছিল- যেটা আমরা ক্ষমতায় থাকতে যেটা প্ল্যান করেছিলাম-ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন আমরা প্রাইভেটকে দিয়ে দেব। সরকারের কাজ না বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যুতের বিল তোলা। তাহলে সেলে টাকাটা পেতাম।

“ট্রান্সমিশনের একই অবস্থা। এগুলো না করে উল্টোটা করেছে। জেনারেশন (উৎপাদন) দিয়ে দিয়েছে প্রাইভেট সেক্টরকে। এটার ফল আমরা পাচ্ছি। এটা বড় ধরনের কূটচাল। দেশের টাকা এভাবে মালিকদের (ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক) পকেটে দিয়ে দেওয়া যেটা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকাররাই করে, এদের মতো ফ্যাসিস্ট সরকাররাই করে “

বিদ্যুতের এ অবস্থার জন্য সরকারের পরিকল্পনায় ‘গলদ’ ছিল দাবি করে তিনি বলেন, “এই সরকার আসার পরে আমাদের যে প্রতিষ্ঠিত পাওয়ার সেক্টর প্ল্যান ছিল, যে প্ল্যানে বলা ছিলো যে- বিদ্যুৎ উৎপাদন সরকারের হাতে থাকবে ৬৪ ভাগ। আর ৩৬ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে বেসরকারি খাতে।

“এই সরকার তড়িঘড়ি করে এই যে সব বেস্ট প্ল্যানগুলো প্রাইভেটে দিয়ে দিল। রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে এসে, সেই রেন্টাল পাওয়ারগুলোকে এটা শর্টটার্মের কথা- এগুলোকে বেস্ট টার্ম বানিয়ে ফেলল। এই সব মিলিয়ে তারা এই পরিকল্পনার মধ্যে আমি মনে করি খারাপ পরিকল্পনা ছিলে, দুরভিসন্ধি পরিকল্পনা ছিল এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল।”

টুকু আরও বলেন, “যার ফলে তারা বিদ্যুতে যে আইন এবং আমাদের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট ল, সেগুলোকে জলাজলাঞ্জলি দিয়ে সংসদে আইন পাস করে যাকে ইচ্ছা তাকে পাওয়ার স্টেশন দিয়ে দিল। কিছু কিছু পাওয়ার স্টেশনে ইনডেমনিটি বা স্টেট গ্যারান্টি দিল।

ডিজেলের দাম ‘আকাশচুম্বি’ হয়ে যাওয়ায় আপাতত দেশের ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন স্থগিত রাখা হবে। পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সরকারের এ সিদ্ধান্তে বিদ্যুৎ সঙ্কটের সমাধানে কাজে আসবে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবেলার জন্য করা হয়নি। এটা হচ্ছে যে আমার এক্সচেকারে, আমার রিজার্ভে টান পড়েছে। সেই রিজার্ভে টান পড়ার জন্য জ্বালানি তেল ইমপোর্ট করতে পারছে না, এলসি খুলতে পারছে না, বিপিসি তেল আনতে পারছে না, গ্যাস আনতে পারছে না। যার জন্য এই চাপটা পড়েছে। যাতে কত খরচে কম ইমপোর্ট করতে হয়।”

ডলার সঙ্কটের প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য টুকু বলেন, “সারাদিন সরকার ঢোল পিটাইছে- এত রিজার্ভ! সেই রিজার্ভ গেল কোথায়, হঠাৎ উধাও হল কেন? ৪৩ বিলিয়ন থেকে ৩৮-এ নামল কেন? সারাদিন ঢোল পিটাইছে এই আছে, ওই আছে, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড সব ছাড়িয়ে গেছি আমরা। আজকে কিন্তু দেশ একটা অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়ে গেছে। এর জন্য সরকারকেই আমি দায়ী করব।”

“আমরা দেখেছি শতভাগ বিদ্যুতের দিবস উদযাপনে আমরা হাতিরঝিলে রঙিন অনুষ্ঠান, ফানুস দেখেছি, নাচতে দেখেছি। আজকে এসে বলছে যে, আমরা বিদ্যুৎ দিতে পারছি না। ইউক্রেইন যুদ্ধ হয়ে গেছে বড় স্কেপ বডি,” বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ও সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।