বাংলাদেশে নির্বাচন আয়োজন কঠিন বলে দাবি করছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল; আর এজন্য রাজনৈতিক পরিবেশকেই দায়ী করেছেন তিনি।
Published : 18 Jul 2022, 09:47 PM
তিনি বলেছেন, “আজকে আপনি আমাকে অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন কমিশনার করে দেন, বিলেতের নির্বাচন কমিশনার করে দেন-কত সহজে নির্বাচনটা করে ফেলতে পারব দেখেন। এখানে নির্বাচন করা অনেক কঠিন কাজ। এটা হচ্ছে আমাদের রাজনীতি।”
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের দ্বিতীয় দিন সোমবার বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে আলোচনায় এক দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের এক বক্তব্যের সূত্র ধরে একথা বলেন হাবিবুল আউয়াল।
সাইফুল হক ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বর্তমানে নির্বাচনী ব্যবস্থা ‘ধ্বংস হয়ে গেছে’। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম আস্থা নেই। বিদ্যমান বৈরী ও প্রতিশোধাত্মক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের কোনো অবকাশ নেই।
দলীয় সরকারের চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার হলে ইসির পক্ষে দায়িত্ব পালন সহজ হবে বলে মত জানান তিনি।
তার এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, “শুধু নির্বাচন ব্যবস্থা নয়, রাজনীতি-নির্বাচন ব্যবস্থা অনেক কিছুই কিন্তু পচে গেছে। এখন একটা পচে যাওয়া জিনিস থেকে খুব সাহস নিয়ে বলছি, অনেক কিছু পচে গেছে।”
সংলাপ শুরুর দিন রোববারও বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শিবিরের পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন সাবেক আমলা হাবিবুল আউয়াল। একে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবেও দেখাচ্ছিলেন তিনি।
তিনি বলেছিলেন, “রাজনৈতিক সমঝোতা, ঐকমত্য খুবই দরকার। আমরা কালকেও দেখছি-একটা বড় ঐকমত্য একদিকে; আরেকদিকে সরকার। আমরা খুব বেদনাহত হই বক্তব্যগুলো যখন সাংঘর্ষিক হয়।”
রাজনৈতিক সমঝোতার স্বার্থে নিজের সরে যাওয়ার কথা আগের দিন যেমন তিনি বলেছিলেন, এদিনও তা বলেন হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, “আমার পদত্যাগ করতে দেরি হবে না। কারণ, যখন বিএনপি বললো-অলরেডি আমাদের উপর আস্থার প্রশ্নই আসে না, আমরা সুবিধাভোগী। এবং সরকার পরিবর্তন হবে, নির্বাচনকালীন সরকার হবে, তখন নতুন করে…”
আবার তিনি বলেন, “এটা নিয়ে আমরা মোটেই আতঙ্কিত নই। কিন্তু বিদ্যমান কাঠামোয় আমরা সাহসিকতার সঙ্গে, সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে যাব।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নেওয়া এই সিইসি বলেন, “অনেকে মনে করেন, আমরা পদগুলোকে আঁকড়ে ধরে রাখার জন্যে … এখানে প্রচণ্ড রকম অনেক মধু আছে। না, আমি এখানে কোনো মধুর সাক্ষাৎ পাইনি। এখানে কাজ করতে এসেছি, সবার যে প্রত্যাশা।”
২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আভাস দেন তিনি।
তলোয়ার-রাইফেল ‘কৌতুক’
নির্বাচনে তলোয়ার-রাইফেল নিয়ে বক্তব্যের কঠোর সমালোচনার পর সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, রোববার সংলাপে ‘কৌতূক’ করে ওই কথা বলেছিলেন তিনি।
সোমবার সংলাপের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “সংলাপে (রোববার) এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ প্রসঙ্গক্রমে অস্ত্রের কথা বললেন। আমি বললাম, আপনি বন্দুক নিয়ে দাঁড়াবেন। কারণ ওরা তলোয়ার নিয়ে এলে আপনিও বন্দুক নিয়ে দাঁড়াবেন।
“এটা কি কখনো মিন করা হয়? একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কি এতটুকু জ্ঞান নাই! একটা কথা আছে- যে এটা কি অন্তর থেকে বলা হয়েছে, নাকি কৌতুক করা হয়েছে, এগুলো বুঝতে হবে।”
এনিয়ে সমালোচনায় আশাহত হয়েছেন সিইসি। “এটা নিয়ে পেপারে প্রধান খবর, একটা মানুষকে নামিয়ে দেওয়ার। এরপর তো আর মনোবল থাকে না কাজ করার। কাজ করার মনোবলও থাকে না; ইচ্ছেও করে না,” বলেন তিনি।
ইভিএমের বিরোধিতা
সোমবার সংলাপে অংশ নিয়ে তিনটি দলই ইভিএমের বিরোধিতা করেছে। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নির্বাচনের সময় পাঁচটি মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে রাখাসহ ৯ দফা সুপারিশ পেশ করে। খেলাফত মজলিস নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছে কমিশনে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিধানসহ ২০ দফা সুপারিশ দিয়েছে।
সাংবিধানিক নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব রেখেছে সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট। ইভিএমের সরাসরি বিরোধি না হলেও ত্রুটিমুক্ত করে প্রযুক্তিটি সংসদে পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহারের পক্ষে মত রয়েছে দলটির।
সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনারের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অন্তত ১০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংলাপে মঙ্গলবার বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সঙ্গে ইসির বৈঠকের সূচি রয়েছে।