রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরুর পর প্রথম দিনেই তিনি জানালেন, তেমন ক্ষেত্রে ‘বলার আগেই পদ ছেড়ে চলে যাবেন’ তিনি।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি ও তাদের মিত্ররা একাদশ সংসদ নির্বাচনে এলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নির্দলীয় সরকারের দাবি পুনরায় তুলেছে।
তা না হলে তারা ভোটে অংশ নেবে না বলে জানালেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই।
এমন অবস্থায় গত মার্চ মাসে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নিলেও তাদের নানা আয়োজনে সব রাজনৈতিক দলের সাড়া পাচ্ছে না।
ইভিএম নিয়ে সংলাপ বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল বর্জনের পর নির্বাচনে নিয়ে সংলাপেও তারা না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
সংলাপে সিইসি বলেন, “রাজনৈতিক সমঝোতা, ঐকমত্য খুবই দরকার। আমরা কালকেও দেখছি-একটা বড় ঐকমত্য একদিকে; আরেকদিকে সরকার। আমরা খুব বেদনাহত হই বক্তব্যগুলো যখন সাংঘর্ষিক হয়। আমরা চাচ্ছি বক্তব্যগুলো মিচুয়ালি একোমোডেটেড হোক এবং সমঝোতার দিকে এগিয়ে যাক, যাতে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়।”
রাজনৈতিক সমঝোতায় পরিস্থিতি বদলে গেলে ‘ভালো’ নির্বাচনের জন্য পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
“যদি তার শর্ত হয়, নতুন নির্বাচন কমিশন অনেক যোগ্যতর লোকদের আনা হবে, সেটা আমাকে কিন্তু আহ্বান করতে হবে না। আমি চাই সম্প্রীতি, রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা, ঐকমত্য এবং সুন্দর একটা নির্বাচন আমাদেরকে দিয়ে না, যে কাউকে দিয়ে হবে। যে কাউকে দিয়ে করানোর জন্য যদি আমাকে এই পদ থেকে সরে যেতে হয়, এ জন্যে আমাকে রিকোয়েস্ট করতে হবে না। রিকোয়েস্ট করার আগেই চলে যেতে পারব।”
দ্বাদশ সংসদ নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে সিইসি বলেন, “আমরা নির্বাচনের সময় কঠোর হব। সংবিধান ও আইনে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা সর্বোতভাবে পালন করব। আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্যতা অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। চেষ্টা করতে হবে সহিংসতা রাজনীতি নয়, সহিংতার নির্বাচন নয়; সম্প্রীতিমূলক ও আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচন করা। এটা সম্ভব।”
তিনি বলেন, “এই পদে কিন্তু আমরা আমোদ-ফূর্তি করতে আসি নাই। কঠিন একটি দায়িত্ব নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে এসেছি। কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি, আমরা বসে নেই, সব কর্মকাণ্ড আপনাদের জানানো হবে।”
ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ না দেখলেও এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি কমিশন। দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আরও আলোচনা হবে বলে জানান সিইসি।
রোববার তিন দল সংলাপে, এক দল আসেনি
নির্বাচন কমিশনের সংলাপের প্রথম দিনে অংশ নিয়েছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।
বিএনপি জোটের দল বাংলাদেশ মুসলিম লিগ এদিন আমন্ত্রিত হলেও সংলাপে যায়নি।
এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে দলটি আট দফা সুপারিশ তুলে ধরে। তার মধ্যে রয়েছে- সংসদ নির্বাচনে একাধিক দিনে ভোটগ্রহণ, নির্বাহী বিভাগ থেকে রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ না করা, ভোটের সময় জনপ্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, ইভিএমে পেপার অডিট ট্রেইল যুক্ত করা ইত্যাদি।
বিএনএফ চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, “কিছু কিছু নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কোনো নির্বাচনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না।
“দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য সুস্পষ্ট। অতীত অভিজ্ঞতায় বলে, নির্বাচন কমিশনের উপর সরকার প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এমতাবস্থায় অতীতের সব সন্দেহ অবিশ্বাস মুক্ত হয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির ভূমিকার দিকে দেশবাসী তাকিয়ে আছে।”
চেয়ারম্যান রেজাউল হোসেনের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেন বাংলাদেশ কংগ্রেস। দলটির মহাসচিব মো. ইয়ারুল ইসলাম নয় দফা সুপারিশ তুলে ধরেন।
সোমবার বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, খেলাফত মজলিশ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে ইসির সংলাপ রয়েছে।৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ৩৯ টি নিবন্ধিত দলের সংলাপ শেষ করার কথা।