হাজারটা পদ্মাসেতু করেও লাভ ‘হবে না’: ফখরুল

গণতন্ত্র ‘অবুরদ্ধ রেখে’ হাজারটা পদ্মা সেতু করেও লাভ ‘হবে না’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার নির্বাচন দিয়ে দেখুক জগণের আস্থা কতটা?

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2022, 11:47 AM
Updated : 5 July 2022, 11:47 AM

‘দেশের জনগণ পাশে থেকে বার বার ভোট দিচ্ছে এবং তাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে’-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

মঙ্গলবার দুপুরে বিএপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব বলেন, “নির্বাচন দিয়ে দেখুক না ওনাদের প্রতি কতটুকু আস্থা আছে? হাজারটা পদ্মাসেতু করেও কোনো লাভ হয় না।

“আইয়ুব খান যে উন্নয়ন করেছিল পাকিস্তান আমলে, কিন্তু জনগণের রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয়, জনগণ যদি গণতন্ত্রকে না পায়, গণতন্ত্র যদি না থাকে, তার অধিকার যদি না থাকে, ভোটাধিকার না থাকে, সেখানে কিন্তু কোনো লাভ হয় না।

“আর ভোট দিচ্ছে কোথায়? মানুষ ভোট দিতে পারছে কোথায় যে, জনগণের আস্থাটা গ্রহণ করছেন তিনি কীভাবে? তিনি তো কাগজে-কলমে সিল মেরে আগের রাত্রে ভোট দিচ্ছেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের মতো আরকি।”

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচনের বিষয়ে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা নির্ভর করবে নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হবে কি না তার ওপর।

“যদি নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হয় তাহলে আমাদের অংশগ্রহণ অবশ্যই দৃশ্যমান হবে। আর যদি না হয় হবে না।”

নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, বাংলাদেশে যদি একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে হয় এখানে অবশ্যই একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার থাকতে হবে।

“তা নাহলে এখানে কোনো মতেই আপনার যদি একেবারে স্বর্গ থেকে নির্বাচন কমিশনার নিয়ে আসেন তাহলেও সেটাকে সুষ্ঠু করতে পারবেন না-ইমপসিবল।”

দ্বিতীয়বারের মতো গত ২৫ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে টানা ৮ দিন নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নেন মির্জা ফখরুল। রোববার করোনামুক্ত হওয়া্র পর মঙ্গলবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আসেন।

এসময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সোমবার অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকার বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। বানভাসি মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে সরকারের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান নয়।”

স্থায়ী কমিটির সভায় অবিলম্বে দুর্গত মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, গৃহ নির্মাণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানানো হয় বলে জানান সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশজুড়ে জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ সঠিকভাবে হয়নি বলে পরিকল্পনামন্ত্রীর স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যায় কী অবস্থা। প্রকৃতপক্ষে জনশুমারি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

“এই সরকারের আমলে সব ধরনের সমীক্ষা জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী হওয়ার প্রকৃত তথ্য কখনোই পাওয়া সম্ভব হয়নি।”

গত ১৫ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত টানা সাতদিন দেশের প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি হয়। পরবর্তীতে এ কাজে গণনাকারীদের অবহেলার কথা স্বীকার করে গণমাধ্যমে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বক্তব্য আসে।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “জনগণকে এবং বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য, দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার জন্যই সরকার এই ধরনের নীতি বিবর্জিত কার্য্কলাপ করে চলেছে।

“ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সকল তথ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। বিএনপি সঠিক পদ্ধতিতে প্রকৃত জনশুমারি ও গৃহগণনার ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছে।”

সম্প্রতি সাভারে স্কুল শিক্ষক হত্যা এবং নড়াইলে অধ্যক্ষকে অপমান করার মতো সামাজিক নৈরাজ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “সভা মনে করে, এই অনির্বাচিত সরকোরের কোনো দায়বদ্ধতা না থাকায় সমাজের সকল পর্যায়ে নীতি-নৈতিকতার চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে।

“নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট এবং সরকার গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টি করলেই সমাজে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

সম্প্রতি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫০তম অধিবেশনে ‘ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার নিরাপত্তা জোরদার’ শীর্ষক প্রতিবেদেনে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলেরর দাবিতে’ সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

“এটাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকার সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে গণতন্ত্রকে হরণ করেছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রচণ্ড লোডশেডিং হচ্ছে, এটা ভয়াবহ। সরকারের শতভাগ বিদ্যুতের যে কথা, আজকের এই অবস্থা (লোডশেডিং) প্রমাণ করে যে, আমরা যেটা, কথাগুলো বলে আসছি- সেগুলো বাকসর্বস্ব কথা।

“এগুলো (কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা, এসব করে নিজেদের পকেট ভারী করা, বিদেশে গিয়ে বাড়ি-ঘর তৈরি করা।

“এখন এটা প্রমাণিত হচ্ছে যে, আমরা যেটা বলে আসছিলাম, আলটেমেটলি দেখা যাবে যে, সবই একেবারে ভঙ্গুর অবস্থা। সেই ভঙ্গুর অবস্থার দিকেই আমরা চলে যাচ্ছি।”

ইডিএফ (রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল) না দিয়ে রিজার্ভ থেকে সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালীদের সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ায় রিজার্ভ এখন ৩৪ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি।

“ওই ধরনের প্রায় সবটাই (ফোর্সডলোন অধিকাংশই রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকের) পর্যবসিত হয়েছে। আইএমএফ এই ধরনের ঋণের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে।

“এই সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার অবয়বে আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকার অর্থনীতির সকল নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে, রিজার্ভের সকল বিধি ভঙ্গ করে শুধুমাত্র নিজেদের ঘনিষ্ঠ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে।

“ইডিএফ ঋণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ব্যবসা, স্থাপনা তৈরি করে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করছে।”

এসবের সুদূরপ্রসারী প্রভাব সমগ্র অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে ফেলবে জানিয়ে অর্থনীতিবিদরা শংকা প্রকাশ করেছেন উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় বলে জানান তিনি

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।