সাংবাদিকদের চাওয়া অনুযায়ী হবে ‘গণমাধ্যম কর্মী আইন’: তথ্যমন্ত্রী

সাংবাদিকদের দাবিতেই রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইনের জন্য ‘গণমাধ্যম কর্মী আইন’ হচ্ছে এবং তাদের চাওয়া অনুযায়ীই এর সংশোধন হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2022, 12:46 PM
Updated : 2 July 2022, 02:16 PM

শনিবার দুপুরে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য-বিশারদ মিলনায়তনে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) তৃতীয় সম্প্রচার সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সাংবাদিকদের দাবির প্রেক্ষিতে এই আইন। তারা যেভাবে চাইবে সেভাবেই হবে। তারা না চাইলে এই আইন হবে না। এটা নিয়ে কোনো বিতর্কের সুযোগ নাই।”

দেশের সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের চাকরির সুরক্ষা, সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি ও অধিকার নিয়ে আইন থাকলেও টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইন সাংবাদিকদের জন্য কোনো আইন নেই।

তাদের জন্য ২০১৮ সালে একটি সুরক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে গত ১ এপ্রিল সংসদে  ‘গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২’ উপস্থাপন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আছে। তবে এ আইনের নামসহ বিভিন্ন ধারা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে আপত্তি রয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি দেখেছি সেখানে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। সেগুলো আসলে যখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঘুরেছে, তখন সেখানে কিছু কিছু ঢুকেছে। সেগুলো সমীচীন হয়নি বলে আমি ব্যক্তিগতভাবেও মনে করি।”

সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, প্রেস কাউন্সিল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ যারা আইন প্রণয়নে পূর্বে কাজ করেছে, তাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে।

“সেই আলোচনায় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত করে প্রস্তাবনাগুলো দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও আমরা সেই প্রস্তাবনা পাইনি।

“আমরা যদি প্রস্তাবনাগুলো পাই, কমিটির মাধ্যমে সেগুলো পরিবর্তন পরিমার্জন করা হবে।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এই আইনের দাবি কিন্তু সাংবাদিকরা করেছে। মালিকপক্ষ কিন্তু এই আইন চাচ্ছে না। মালিকপক্ষের একটি অংশ ইতোমধ্যে বিবৃতিও দিয়েছে।

“এখন যে সমস্ত আইন দেশে বলবৎ আছে, পুরোটা না পারলেও কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারছে। সংবাদপত্রে যারা কাজ করেন তাদের সুরক্ষা দিতে পারছে।”

ইলেক্ট্রনিক বা অনলাইন মিডিয়ার কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কোনো আইন নাই উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, “এ আইনের ত্রুটি, বিচ্যুতি, পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হবে, সেটা নিয়ে আমরা একমত।

“আপনারা প্রস্তাবনা দিলে সেগুলো ইনকর্পোরেট করা হবে, এটা নিয়ে বেশি কথা বললে জল ঘোলা হবে। জল ঘোলা করার তো কোনো দরকার নেই।”

সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে দ্রুত সংশোধন প্রস্তাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আপনারা যত দ্রুত প্রস্তাবনাগুলো দেবেন, তত দ্রুত সেটা পরিপূর্ণ আইনে পরিণত করা সম্ভব হবে।

“এই আইন হলে ইলেক্ট্রনিক মিডয়ায় যারা যুক্ত আছেন এবং অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, রেডিওর সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, তাদের জন্য এই আইন সুরক্ষা হবে।”

প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, আইনটি একেক সময় একেক রূপ ধারণ করেছে। প্রথম যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল, মাঝখানে সেটি থাকেনি।

“পরবর্তী সময়ে আরেক রূপ, চূড়ান্ত পর্বে দেখলাম একটা বীভৎস রূপ ধারণ করেছে।”

এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যতগুলো সাংবাদিক সংগঠন আছে, সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, সংশোধিত আকারে এটা আমরা আবার তৈরি করেছি, দু-চার দিনের মধ্যেই আমরা জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিতে এটা পাঠাব।”

এর আগে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিজেসি আয়োজিত ‘জনস্বার্থ, সাংবাদিকতা-সংবাদকর্মীর সুরক্ষা’ শীর্ষক এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

২০১৯ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়ন, সুরক্ষা ও কর্ম পরিবেশের উন্নয়নে কাজ করে সুন্দর অবস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছে বলে অনুষ্ঠানে জানান তিনি।

“জনস্বার্থে সাংবাদিকতা-সংবাদকর্মীর সুরক্ষা প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজকের এ আয়োজন প্রশংসনীয়।”

বাংলাদেশ এখন তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সুবর্ণ সময় অতিক্রম করছে উল্লেখ করে শিরীন শারমিন বলেন, দেশে গণমাধ্যমের কার্যপরিধি এখন অনেক বিস্তৃত। বিপুল দক্ষ জনগোষ্ঠী এখানে সম্পৃক্ত রয়েছে।

বিজেসির সম্মেলনে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে স্পিকার বলেন, “আপনাদের আলোচনায় বেতন-ভাতা,ঝুঁকি ও চাকরির অনিশ্চয়তা নিয়ে অনেক বিষয় আলোচনা হচ্ছে।

“এই সম্মেলনের মাধ্যমে আপনার আপনাদর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন এবং কীভাবে এর গ্রহণযোগ্য সমাধান পাওয়া যায়, সেই বিষয়গুলো এখানে ব্যাপকভাবে আলোচিত হতে পারে।”

সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বিজেসির সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ বলেন, “গণমাধ্যম কর্মী আইন নিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছাব বলে আজকে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি।

“গণমাধ্যম কর্মী নামে যে আইনটি এটার নাম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের সাংবাদিকরা বলছেন, এই আইনটির নাম গণমাধ্যম কর্মী বললে ১৯৭৪ সালের আইনের স্পিরিটের সঙ্গে যাচ্ছে না।

“বরং এটা সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন বলা যেতে পারে। যদি গণমাধ্যম কর্মী শব্দটি রাখতেই হয় তাহলে এর সঙ্গে শব্দটি যোগ করে দেওয়া যেতে পারে।”

প্রস্তাবিত আইনে গণমাধ্যমকর্মীর বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হলে স্বাভাবিক অবসরে যেতে পারবেন, এটি ৬৫ বছর করার দাবি জানিয়েছেন শাকিল আহমেদ।

এছাড়া গণমাধ্যম আদালত ও সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়নে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি সংশোধনের দাবি জানান।

সম্মেলনে সম্প্রচার সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য পাঁচটি ক্যাটাগরিতে সাংবাদিকদের পুরষ্কার দেওয়া হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিজেসি’র সভাপতি রেজোয়ানুল হক। আলোচনাসভায় সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ)সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন।

আরও খবর