জন্মদিনে বাম সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত মতিয়া চৌধুরী

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী নিজের জন্মদিন ও বইয়ের পুনঃপ্রকাশনা অনুষ্ঠানে বামধারার রাজনৈতিক সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2022, 05:29 PM
Updated : 3 July 2022, 04:55 AM

শুক্রবার পল্টনের মণি সিংহ স্মৃতি ট্রাস্ট মিলনায়তনে ‘দেয়াল দিয়ে ঘেরা’ বইয়ের পুনঃপ্রকাশনা আয়োজনে ষাটের দশকের সহকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছা পান তিনি।

তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের মেনন অংশের সভাপতি বর্তমানে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বই উপহার দিয়ে মতিয়া অংশের সভাপতি বেগম মতিয়া চৌধুরীকে শুভেচ্ছা জানান।

মেনন বলেন, “আমি যখন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি, তখন মতিয়া চৌধুরীও সভাপতি। মানুষ বলতো মেনন গ্রুপ আর মতিয়া গ্রুপ। যদিও রাজনৈতিক কারণে আমাদের আলাদা গ্রুপ ছিল, কিন্তু সম্পর্ক সবসময়ই ভালো ছিল। আজকে আমার স্ত্রী, যার সঙ্গে আমার প্রণয় হয়েছে, সেও কিন্তু মতিয়ার কর্মী, মতিয়া গ্রুপ করত।

“তখন দুজনে আমরা ইচ্ছে করলেই রিকশায় ঘুরে বেড়াতে, আড্ডা দিতে পারতাম না। আড্ডার জায়গা ছিল মতিয়ার বাসা। রান্নাবান্না খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা হত ওইখানেই।”

রাজপথে মতিয়া চৌধুরীকে পাশে পাওয়ার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “তখন এক আন্দোলনে আমি নেতৃত্ব দিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে আসি, মতিয়াও মিছিল করতে করতে প্রেস ক্লাবের সামনে আসে। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে, আমার মাথায় পুলিশ যে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে ছিল, সেই লাঠি কিন্তু মতিয়া ফিরিয়েছে।

“তখনকার পত্রিকায় ছবিটা প্রকাশও হয়েছিল। আমি আজকে মতিয়ার জন্মদিনে ও বইয়ের পুনঃপ্রকাশনা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানাই। শতায়ু হোক মতিয়া চৌধুরী।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “একটা সময় ছিল রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা জেলে যেত দাবি-দাওয়া আদায়, অধিকার আদায়ের আন্দোলন করার জন্য। আজকে এখন রাজনৈতিক নেতারা জেলে যায় অর্থ আত্মসাৎ, লুটপাট, দখল দারিত্ব ও সন্ত্রাসবাদের কারণে।

“মতিয়া চৌধুরী সাদাসিধা মানুষ, সাদাসিধা জীবনযাপন করেছেন, সততার সঙ্গে মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। বিলাসিতাবর্জিত জীবন দিয়ে যে সম্মানের সঙ্গে চলা যায়, এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মতিয়া চৌধুরী। …আসুন মতিয়া চৌধুরীর মত ত্যাগের রাজনীতি করি, লুট করার রাজনীতি নয়।”

সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “বামপন্থি রাজনীতির যে শক্তি ওই সময় ছিল, যে সততা ছিল- মতিয়া চৌধুরীর মধ্যে আমরা সেটা এখনও পাই। আমার মনে হয়েছে, তাত্ত্বিক আলোচনায় অংশ নিয়ে বর্তমান বামধারার রাজনৈতিক নেতারা যে সময় নষ্ট করছেন, তারা জনগণ থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন।

“আমি তখন বামধারার রাজনীতিতে উনার সঙ্গেই ছিলাম, অনেক আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত ছিলাম। আমি গর্ব করে বলতে পারি, বাম রাজনীতির প্রতি আমার ঋণ অনেক। বাম রাজনীতির জন্যই আজকে আমি মুক্ত চিন্তার মানুষ, অসম্প্রদায়িক চিন্তার মানুষ।”

দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, “মতিয়া আপা ছাত্র রাজনীতির সময় এমন বক্তব্য দিতেন যে, এই বক্তব্য লোকজন ধরে রাখার পাশাপাশি রাজনীতির প্রতিউত্তর হয়ে যেত। আমি নিজেও উনার কর্মী ছিলাম।”

অনুষ্ঠানে মতিয়া চৌধুরী বলেন, “অনেক দিন পর প্রিয়জনদের কাছে পেয়েছি, এক সময়কার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ছিলেন তারা। আজকের এই দিনে আমি বলব, গণতান্ত্রিক প্রগতিশীলতার রাজনীতি এগিয়ে যাক।”

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, যে রাজনীতি মানুষের জীবনযাত্রার ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারে, সেটাই সত্যিকারের কল্যাণের রাজনীতি।

“পাথরের মত রাজনীতি হলে সেটা টিকে থাকতে পারে না। রাজনীতি করতে হবে মানুষের জন্য। মানুষের সমর্থনে রাজনীতি প্রতিষ্ঠা হয়।”

মতিয়া চৌধুরীর জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মসিউর বলেন, “তার রাজনীতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য সহমর্মিতা। সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধনে তার রাজনৈতিক জীবন পার হচ্ছে।”

অনুষ্ঠানে মতিয়া চৌধুরীকে মণি সিংহ স্মৃতি ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ক্রেস্ট।  

মণি সিংহ স্মৃতি ট্রাস্টের সদস্য মাখদুমা নাসরিন রত্নার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন মণি সিংহ স্মৃতি ট্রাস্টের সভাপতি শেখর দত্ত, আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক সামসুন্নাহার চাঁপা, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, মণি সিংহ স্মৃতি ট্রাস্টের সম্পাদক মুকুল চৌধুরী, উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা আব্রাহাম লিংকন, মণি সিংহ স্মৃতি ট্রাস্টের সদস্য সায়মা আলী অদিতি।