ইউনূস, হিলারি, শেরির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চান এমপি নিক্সন

পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূস, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারের ওপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2022, 02:50 PM
Updated : 28 June 2022, 02:50 PM

সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মঙ্গলবার তিনি এ দাবি জানান।

পদ্মা সেতুতে কথিত দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের তদন্তে নিক্সন চৌধুরীকে ওই সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী বর্তমানে ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি।

সংসদে তিনি বলেন, “অত্যন্ত কষ্টের সাথে বলতে চাই, কোনো অপরাধ ছাড়া কেন এই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। ইতোমধ্যে কানাডার আদালতে প্রমাণ হয়েছে, এখানে কোনো দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়নি। পদ্মা সেতু যাতে বাস্তবায়ন না হয়ম সেজন্য দেশি-বিদেশি যারা এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

“দাবি জানাই ড. ইউনূস, হিলারি ক্লিনটন, টনি ব্লেয়ারের স্ত্রীর ওপর স্যাংশন দেওয়া হোক। যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এসে নতুন করে কোনো ষড়যন্ত্র না করতে পারে।”

ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন (ফাইল ছবি)

নিক্সন বলেন, “বাংলাদেশের যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ড. ইউনূস, এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী খালেদা জিয়া এবং তার বড় ছেলে চোরা তারেক জিয়া।”

পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পিছু হটেছিল। এ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের পথে এগিয়ে যায়। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায় নির্মিত সেই সেতুর উদ্বোধন হয়েছে গত ২৫ জুন।

বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তুলেছিল, তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি। এ নিয়ে কানাডার আদালতে মামলাও হয়েছিল, কিন্তু তা টেকেনি। 

চাপে পড়ে বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনও সে সময় মামলা করেছিল। মামলার আগে অভিযোগ অনুসন্ধানে মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ নূরে আলম চৌধুরীর ভাই নিক্সন চৌধুরী, সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এসএনসি-লাভালিনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াউল হকসহ ২৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা।

সরকার ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা সরকার দিলে পরের বছরের সেপ্টেম্বরে দুদক ওই মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দেয়। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি’।

সরকার বারাবরই বলে আসছে, বিশ্ব ব্যাংকের সরে যাওয়ার পেছনে ইউনূসের ‘হাত ছিল’। তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে রেখে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকেও চাপ দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য ইউনূস বিবৃতি দিয়ে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এর আগে সংসদে বলেছেন, ইউনূসকে এমডি পদে রাখতে তার (প্রধানমন্ত্রী) পরিবারের সদস্যদের ওপর নানাভাবে ‘চাপ প্রয়োগ’ করা হয়েছিল, হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

ইউনূস এমডি পদে থাকতে না পারায় হিলারি ক্লিনটন এবং শেরি ব্লেয়ারকে দিয়ে ‘ফোন করানো হয়েছিল’, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে তার বক্তৃতায় বলেছেন। 

পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির মিথ‌্যা গল্প’ বানানোর নেপথ‌্যে থাকা ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ খুঁজে বের করতে সরকারকে একটি কমিশন গঠন করতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার ওই আদেশে কমিশন গঠনের জন্য সরকারকে ৩০ ‍দিন সময় দিয়েছে।

সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন মঙ্গলবার সংসদে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করে ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন, তার সরকারের আমলে কেউ অপরাধ করে রেহাই পাবে না। আমি বিশ্বাস করি যারা গরীবের হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে যারা বিদেশের ব্যাংকে টাকা রেখেছেন, যাদের নাম পানামা পেপারস এবং প্যারাডাইস পেপারসে এসেছে, শিগগিরই দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।”