ইভিএমের প্রচার শুরু হোক এখনই: আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিকে আরও জনপ্রিয় এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে এখনই প্রচার শুরুর পরামর্শ দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2022, 01:07 PM
Updated : 28 June 2022, 02:19 PM

মঙ্গলবার বিকালে ইভিএমের কারিগরি দিক যাচাই এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে যন্ত্রটির ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ পরামর্শ দেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এ সভায় আমন্ত্রিত ১৩টি দলের মধ্যে অংশ নেয় ১০টি।

সিইসির স্বাগত বক্তৃতার পর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া শুরু হলে প্রথমেই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল বক্তব্য রাখে।

ইভিএম নিয়ে ক্ষমতাসীন দল নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে কাদের বলেন, “আগামী নির্বাচনে ইভিএমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করার জন্য আমরা সিইসির কাছে আহ্বান করছি। ...আমরা মনে করি, দেশে ইভিএম পদ্ধতি অধিকতর জনপ্রিয় এবং সহজে ব্যবহার করার লক্ষ্যে ইসি এখন থেকেই প্রচার-প্রচারণায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয় আসনে ইভিএম ব্যবহার করেছিল তৎকালীন ইসি। ওই সময়ও আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নেয়। এবার ইভিএমের ব্যবহার ‘উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি’ চাইছে দলটি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। সেই সিদ্ধান্ত আমাদের দিস ইজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার- আমরা ইভিএম পদ্ধতির পক্ষে, রাখঢাক করে কোনো লাভ নেই। ...এখানে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ পদ্ধতিটা বৃদ্ধি করার কথা বলব।”

ইভিএমের পক্ষে নিজেদের অবস্থানের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে, ইসির কার্যক্রমে ইভিএমসহ প্রযুক্তির বৃদ্ধির কারণে সব কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি বেড়েছে। ইভিএম ব্যবহারের ফলে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দল এবং নির্বাচনে জালিয়াতি, ভোট চুরি বন্ধ হবে।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ

নির্বাচনের সময় ভোটের নির্বিঘ্ন পরিবেশসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কমিশনের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সেই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকারের সময় বর্তমান সরকারের ভূমিকা কী হবে তাও তুলে ধরেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “নির্বাচনকালে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্যে আবশ্যকীয় সব সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে ইসির তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত থাকবে। নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবলমাত্র আবশ্যকীয় দৈনন্দিন রুটিন কার্যাবলীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।”

ফাইল ছবি

বর্তমান সরকার ইসির কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

“একটা কথা কেউ কেউ বলে থাকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান সরকারের অধীনে কিন্তু নির্বাচন হচ্ছে না, নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। যে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য বর্তমান সরকার ফ্যাসিলেটেড করবে, সম্পূর্ণ সহযোগিতা আমরা দেব।

“এ সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ যেসব বিষয় নির্বাচন রিলেটেড, সেগুলো আপনাদের অধীনেই থাকবে। এখানে সরকারের কিছু করণীয় নেই। সরকার কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে মোটেও আগ্রহী নয়।”

ইভিএম নিয়ে বিপক্ষেই বেশি কথাবার্তা: সিইসি

ইভিএম নিয়ে বিপক্ষেই বেশি কথাবার্তা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।

সভার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সিইসি বলেন, “আমরা যখন দায়িত্ব নিই, কিছুদিন পর থেকেই ইভিএম নিয়ে কথাবার্তা পত্রপত্রিকায় চাউর হয়েছিল। এর পক্ষে এবং বিপক্ষেই বেশি কথাবার্তা হয়েছে।

“আমাদের শুরু থেকেই ইভিএম সম্পর্কে সেরকম ধারণা ছিল না। আমার ব্যক্তিগত ধারণাও ছিল না। আমরা ইতোমধ্যেই ইভিএম নিয়ে অনেক কাজ করেছি। এখন আমাদের মোটামুটি ধারণা আছে।”

দুটি সংলাপে অনেকেই ইভিএমের পক্ষে বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আরও উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম হলে ভালো হয়। আবার অনেকে সরাসরি বলেছেন ইভিএমে নির্বাচনে যাবে না।

“আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন করব, সেটা আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

সিইসি বলেন, বড় বড় দলের অনেকেই এসেছে। আজকে আলোচনাটা ইভিএমেরই মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে বলতে পারেন। সবার আলোচনা শুনে পরবর্তীতে ‘বস্তুনিষ্ঠ’ সিদ্ধান্তে উপনীত হবে কমিশন।  

মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রতিনিধি।

গণফোরামের প্রতিনিধিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, যাদের আমন্ত্রণ ছিল ২১ জুন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, , বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ আমন্ত্রণ পেয়েও আসেনি।

গত ১৯ ও ২১ জুন দুই ধাপে ২৬টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ইভিএম যাচাই বিষয়ক সভা করেছে ইসি। এই দুই ধাপে ১৮টি দল উপস্থিত থাকলেও সাড়া দেয়নি বিএনপিসহ আটটি দল। মঙ্গলবার এ ইস্যুতে তৃতীয় বা সবশেষ সভা করছে ইসি।