তিনি বলেছেন, “সব গেইট ভারত এই বর্ষাকালে খুলে দিয়েছে। যখন আমাদের পানির প্রয়োজন নাই, তখন আমাদেরকে ভাসিয়ে দিচ্ছে।
“যখন আমাদের পানি প্রয়োজন, আমার জীবিকা, আমার জীবন রক্ষার জন্য...তখন উজানের পানি অন্যদিকে দিয়ে বাংলাদেশকে মরুকরণ করে দেওয়া হচ্ছে।”
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোল টেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পানি বণ্টনের ইস্যু’ বিষয়ে এই আলোচনা সভা হয়।
মোশাররফ বলেন, “যে যমুনা নদীর জন্য ব্রিজ হল, এত বড় নদীর জন্য, এখন যারা শুষ্ক মওসুমে নদীর ব্রিজের উপর দিয়ে যান, তারা দেখবেন নিচ দিয়ে ‘গরুর গাড়ি যাচ্ছে’-এই হচ্ছে অবস্থা। কেন? বাঁধগুলোর কারণে।
“আমাদের নদীর তলদেশ গভীরতা হারাচ্ছে এবং বেসিনের গভীরতা হারাচ্ছে। আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, সুরমা বেসিনের তলদেশ কী পরিমাণ উচু হয়ে গেছে, যার জন্য এবার ১২২ বছরেও এরকম বন্যা বাংলাদেশে হয় নাই। কেন হচ্ছে? এই বাঁধের জন্য হচ্ছে।”
তার অভিযোগ, “পানি ব্যবস্থাপনার একতরফা যে সিদ্ধান্ত আমরা যারা নিচের দিকে বাস করি, এই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে যে নতজানু নীতি, তার জন্য আজকে এটা করা সম্ভব হচ্ছে।”
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি এক দশকের না করতে পারায় সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তোলেন তিনি।
মোশাররফ বলেন, “কিছুদিন আগে লোক দেখানো আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়ে জেআরসি মিটিং করেছেন। সেই মিটিংয়ে কী করেছেন? জয়েন্ট রিভার কমিশনের কোনো রিপোর্ট ছাড়া যে তারা ‘লিপ সার্ভিস’ একটা দিলেন- এটা আসলে বাংলাদেশের মানুষকে প্রতারণা করা হয়েছে।
“কারণ সবাই জানেন, বন্যায় যখন বাংলাদেশ তলিয়ে গিয়েছে, মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, এখন পর্যন্ত ভালো করে এর হিসাব দেওয়া হচ্ছে না।”
বানভাসিদের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন,“আজকে বন্যার্তদের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। সেখানে মানুষ কী পরিমাণ মানবেতর জীবন-যাপন করছে, আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, মিডিয়ায় দেখেছেন।
“সরকারের পক্ষ থেকে সেরকম...যে প্রলয়ঙ্করী বন্যা হয়েছে, তা মোকাবিলায় যেভাবে এগিয়ে আসার কথা ছিল, যে পরিকল্পনা থাকার কথা ছিল- আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। তারা অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল।”
মোশাররফ বলেন, “দুর্ভাগ্য জনগণের। জনগণের ভোটের সরকার যদি না হয়, জনগণের সরকার যদি না হয়, তাহলে জনগণের কষ্ট, জনগণের দুঃখ প্রাধান্য পায় না, পায় ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠী স্বার্থ।”
গোল টেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মোস্তফা কামাল মজুমদার। সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ, জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা ড. এস আই খান, পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী এম ইনামূল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।