দারিদ্র্যের ফাঁদ থেকে মুক্ত বাংলাদেশ: জয়

সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কীভাবে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসছে, তার বিবরণ এক নিবন্ধে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2022, 04:47 PM
Updated : 24 June 2022, 04:52 PM

ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে গত সোমবার প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, গৃহহীন ও বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য সরকারের তরফ থেকে যে ঘর দেওয়া হচ্ছে, তাতে সুফল মিলতে শুরু করেছে।

১৯৯৭ সালে দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আওতায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ৩০ হাজার পরিবারকে ঘর বানিয়ে দেওয়া হবে। তাতে সরকারের এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী পরিবারের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয়।

কেবল ঘর নয়, এ প্রকল্পের আওতায় সুপেয় পানি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনার মতো বিষয়গুলোও যে আছে, তা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র জয় লিখেছেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ, গবাদি পশুপালন ও ডিজিটাল সাক্ষরতা নিয়ে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই লাখ ৯৮ হাজারের বেশি পরিবার সুবিধা পেয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্প যেভাবে লাখ লাখ মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে, সেই বিবরণ দিয়ে তিনি লিখেছেন, “এর মধ্যে একটি বড় অর্জন হচ্ছে- পুরুষশাসিত যে প্রথা ছিল তা ভেঙে ফেলা। সম্পত্তিতে নারীদেরও এখন পুরুষের সমান অধিকার। ভূমিসহ আশ্রয়ণের সবকিছুতে স্বামী-স্ত্রী যৌথভাবে মালিকানা পাচ্ছেন।”

ফলে নারীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে (২০২১) লৈঙ্গিক বৈষম্য নিরসনে বাংলাদেশের বড় অগ্রগতির যে কথা বলা হয়েছে, সে প্রসঙ্গ টেনে জয় লিখেছেন, যদিও এখনো অনেক কাজ বাকি, এরপরও দেশের নারীরা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করছেন এখন। নারীর মর্যাদা বৃদ্ধির প্রশ্নে সরকারের অঙ্গীকারের কারণে অর্থনৈতিক ও সামাজিক- উভয়ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন।

নিবন্ধে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৭.৫ শতাংশ, তা ২০২০ সালে ২০.৫ শতাংশে নেমে আসে। আর অতি দরিদ্রের হার ২০০৯ সালের ১৯.৩ শতাংশ থেকে ২০২০ সালে ১০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘অসাধারণ অগ্রগতির’ প্রশংসা করে সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংক ‘দারিদ্র্য বিমোচনের মডেল’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এ দেশকে।

দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলতে গিয়ে জয় লিখেছেন, ২০০৯ সালে যেখানে জিডিপি (মাথাপিছু) ছিল ৭১০ ডলার, ২০২০ সালে তা বেড়ে ২০৬৪ ডলার হয়। জিডিপির টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বলে সম্প্রতি এইচএসবিসি ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে।

শনিবার উদ্বোধন হতে যাওয়া পদ্মাসেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে নিবন্ধে বলা হয়, “এই সেতু বাংলাদেশের জিডিপিতে অতিরিক্ত ২ শতাংশ পয়েন্ট প্রবৃদ্ধি যোগ করবে। যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়নে রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল এবং একাধিক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।”

বাংলাদেশের পোশাক খাতের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৈচিত্রের কথা তুলে ধরে জয় লিখেছেন, এক দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে ২০২১ সালে ২২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও বেশি। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ রের্ক্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।পশ্চিমারা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে বাংলাদেশকে যেভাবে বর্ণনা করত, তার বিপরীতে এটি অসাধারণ অগ্রগতি।

গত এক দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বিশ্ব ব্যাংকের তালিকায় বাংলাদেশের দরিদ্র দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কথা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি ২০২৬ সালে যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে সে কথাও বলেছেন।

তিনি লিখেছেন, “বাস্তব ফলাফল কখনও বিমূর্ত হয় না। আলেয়া বেগমের কথাই ধরুন। ৩০ বছর ধরে আলেয়া এবং তার পরিবার একটি নালার ধারেআবর্জনার স্তূপের পাশে বসবাস করেছেন। তার গায়ের ছেঁড়া কাপড় তার দারিদ্র্যেরই সাক্ষ্য দিত। একদিন তাদের কাঠের ঘরটা ভেঙে খালে তলিয়ে গেলে আলেয়ার আট ছেলে এবং এক মেয়ে মারা যায়। ওই ঘটনার পরপরই আলেয়ার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। একা, নিঃস্ব এবং আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন সেই নারী।”

সেই আলেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে একটি ঘর পাওয়ার পর তার জীবনের গতিপথ বদলে যায়। এখন তার না খেয়ে থাকতে হয় না, জোরপূর্বক শ্রমের শিকার হওয়ার ঝুঁকিও আর নেই। আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাজ শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ প্রথমবারের মত তার সামনে এসেছে।

জয় লিখেছেন, “এই গল্পের মত অসংখ্য ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে। অন্য অনেক দেশেও এই পরিবর্তন আনার সুযোগ রয়েছে।”