তারেকের কথাতেই জিয়া-খালেদার দায় স্বীকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘হত্যার সঙ্গে জড়িত’, তাদের ছেলে তারেক রহমান তা ‘প্রমাণ করেছেন’ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সমর্থন দিয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2022, 09:16 AM
Updated : 23 June 2022, 11:23 AM

আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আজকে তাদের কথার মধ্য দিয়ে… এরাই যে ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, বা চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে, ৭৫ এর হাতিয়ারকে সমর্থন দিয়ে অর্থাৎ খুনিদেরকে সমর্থন দিয়ে।

“কারণ এই খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করেছিল ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে, সেটা আইনে পরিণত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং এদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল।”

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

ছবি: পিএমও

তিনি বলেন, “আজকে এখানে আমি যখন শুনলাম, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া স্লোগান দেয় ‘৭৫ এর পরাজিত শক্তি’… এটার মধ্য দিয়ে সে এটাই প্রমাণ করে যে, তার বাপ যে পাকিস্তানের দালাল ছিল, তার মাও যে পাকিস্তানি দালাল হিসেবেই ছিল এবং এই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করতে চেয়েছিল, আদর্শগুলো একে একে মুছে ফেলে দিয়েছিল, ইতিহাস মুছে ফেলে দিয়েছিল, জাতির পিতার নামটা মুছে ফেলেছিল…।

“কাজেই এটা তো খুব স্বাভাবিক, তারা তো সেই স্লোগান দেবেই। সেই পাকিস্তানি সেনাদের পদলেহন করে চলাটাই তো তাদের অভ্যাস। তারা তো স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। স্বাধীন জাতি হিসেবে যে একটা মর্যাদা আছে, এটাই তাদের পছন্দ না। তারা পরাধীন থাকতেই পছন্দ করে। পাকিস্তানিদের পায়ের লাথিঝাটাটাও তাদের কাছে ভালো লাগত মনে হয়।”

শেখ হাসিনা বলেন, এই ইতিহাস মনে রেখে ‘এদেরকে করুণা’ করতে হবে। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, “এরা চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী’।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার পর যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা কীভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল, সে কথা সভায় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “গুম, খুন- এটা তো জিয়াউর রহমানই শুরু করে দিয়েছিল সেই ৭৫ এর পর, যখন সে রাষ্ট্রপতি হয়। খালেদা জিয়া এসেও তো আমাদের কত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এরশাদের আমলেও আমাদের নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছে।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে আসতে না দেওয়ার যে অভিযোগ দলটির নেতারা করে আসছেন, তার জবাবও সভায় দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “২০০৭ সালে তারেক জিয়া তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল। একেবারে লিখিত দলিল, যে সে আর রাজনীতি করবে না। এই শর্তে সে কারাগার থেকে মুক্তি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। এটা তো বিএনপি নেতাদের ভুলে যাওয়ার কথা না।

“কাজেই তাকে তো কেউ বিতাড়িত করে নাই। স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিল। তারপরে আর সে ফিরে আসেনি। একজন রাজনৈতিক নেতা, তার যদি এই সাহস না থাকে ফিরে আসার, সে আবার নেতৃত্ব দেয় কীভাবে?”

নিজের জীবনে আসা নানা ‘বাঁধা, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত’ সফলভাবে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার কথাও দলের নেতাকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা।

জিয়াউর রহমানকেও যে পরে নিহত হতে হয়েছিল, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “পাপ বাপকেও ছাড়ে না।”

তিনি বলেন, “খালেদা জিয়াও বলতে পারবে না, তার ছেলেও বলতে পারবে না যে কোনো দিন বাপের লাশ দেখেছে। কারণ গুলি খাওয়া লাশ তো দেখা যায়। তারা তো দেখতে পায়নি। সেই কথাটা তো একবারও স্মরণ করে না বিএনপির নেতারা, যে জিয়ার লাশ কোথায়।

“হ্যাঁ, একটা বাক্স এরশাদ সাহেব নিয়ে এসেছিলেন এটা ঠিক। কিন্তু সেই বাক্সে কি ছিল? পরে এরশাদ সাহেবের মুখেই তো আছে যে ওই বাক্সে জিয়ার লাশ ছিল না, কারণ জিয়ার লাশ তখন তারা পায়নি। জিয়ার লাশ কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা বাক্স নিয়ে এসে ওই যে সংসদ ভবনের ওই জায়গায় তারা রেখে দিয়েছে এবং সেখানে গিয়ে ফুল, মালাও দেয়। কিন্তু সেখানে খালেদা জিয়ার স্বামীও নাই, আর বিএনপি নেতাও নাই। এটা হল বাস্তবতা। বাস্তব সত্যটা একদিন না একদিন প্রকাশ হবে।”

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।