ইভিএমে ভোট দিতে দেশের মানুষ প্রস্তুত নয়: জাপা

নির্বাচন কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে এগোতে চাইলেও এবার তাতে আপত্তি তুলল সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2022, 03:01 PM
Updated : 19 June 2022, 03:01 PM

রোববার নির্বাচন কমিশনের আয়োজনে ইভিএম নিয়ে সংলাপে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্যে দেশের মানুষ ‘প্রস্তুত নয়’।

বেশ কয়েকটি রাজনৈনিক দলের সঙ্গে এই আলোচনায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইভিএম চাপিয়ে দিতে চান না তারা। সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হবে।

পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ইভিএমে করার পরিকল্পনা নিয়ে রোববার থেকে এই যন্ত্রের কারিগরি দিক নিয়ে রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়া শুরু করেছে ইসি।

প্রথম দিনে জাতীয় পার্টিসহ ১৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় পার্টি-বিজেপি যায়নি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “আগামী নির্বাচনে পরীক্ষামূলক হতে পারে, কিন্তু সারাদেশে ৩০০ আসনে ইভিএমে হলে এটা হ্যাজার্ড হয়ে যাবে।

“ইভিএমে ভোট দেওয়ার মতো মানুষের প্রস্তুতি নেই। মানুষ ভোট দিতে চায়, কিন্তু মেশিনের বিষয়ে আমাদের ‘রং’ একটা ধারণা। আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই- আগামী নির্বাচন ইভিএমে হোক, তা আমরা চাই না।”

ইভিএম সঠিক হলেও তা নিয়ে মানুষের সন্দেহ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

“ইভিএমে ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলে না, অনেক বিষয় রয়েছে। ইভিএমে আস্থা না দেখানোর কোনো কারণ নেই। কিন্তু ইভিএম নিয়ে ইতোমধ্যে একটা পাবলিক পারসেপশন-ইভিএম মানে অন্য কোনো কারসাজি রয়েছে, এটা বিশেষ কোনো দল কিছু করতে পারে।”

সভায় ইভিএম বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিএমটিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, এনআইডি উইংয়ের সাবেক ডিজি ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ইভিএম-প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম এবং ইভিএম প্রকল্পের বর্তমান প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান।

তারা ইভিএমের খুঁটিনাটি দেখানোর পর তিনটি বিষয় তুলে ধরে ইভিএমের জটিলতা, প্রায়োগিক ও বৈশ্বিক অবস্থান নিয়ে কথা বলেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আতিকুর রহমান আতিক।

তিনি বলেন, “সুন্দর মেশিন বানিয়েছে, ইভিএম। কিন্তু ডিজিটাল যুগে আরও যাতে সহজতরভাবে ব্যবহার করতে পারে। এখন ইভিএম নিয়ে সাধারণ জনগণের খুব বেশি জ্ঞান নেই। যেখানে একটা সিল দিয়ে একটা ভোট কনফার্ম করতাম, সেখানে মেশিনটা এমন করা উচিৎ এক বাটনেই টিপ দিয়েই ভোট কনফার্ম করবেন।”

সিলেটে নিজের আসনে ভোটের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আতিক বলেন, “ফিঙ্গার প্রিন্ট নিচ্ছে না, নানা সমস্যা। আমি প্রার্থী হয়েও আমার ভোট আমি দিতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত পৌনে ৪টায় রিটার্নিং অফিসার যান্ত্রিক ত্রুটি সারতে ইঞ্জিনিয়ার এনে ঠিকঠাক করে আমার ভোটটা দেওয়াইছে।”

গোপন কক্ষে অযাচিত ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “সমস্যা এখানে। এটা ম্যান বিহাইন্ড দ্য গান। এখান গানটা কিভাবে চালাবেন তার উপর নির্ভর করছে।”

আতিক বলেন, “৩৪টি দেশ ইভিএম নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। চারটি দেশ-ভারত, ব্রাজিল, ফিলিপাইন ও এস্তোনিয়া-তারা ইভিএম ব্যবহার করছে। আংশিক ব্যবহার করা ১৪টি দেশ ইভিএম ব্যবহার করে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সরে এসেছে। পাকিস্তান ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য বিল পাস করেছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, মালয়েশিয়া, ভেনিজুয়েলাসহ অনেক বর্জন করেছে। এরমধ্যে যুক্তরাজ্য মনে করে, ইভিএম গণতন্ত্রের বিকাশে বাধা।”

সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি: সিইসি

বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “ইভিএম নিয়ে আমরা এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।

“ইভিএমটা যেহেতু আমরা ব্যবহার করছি। আমাদের উদ্দেশ্য ইভিএম সম্পর্কে আপনাদেরকে ধারণা দেওয়া। কিন্তু আপনাদের মতামত কী হবে, সেটা আপনাদের স্বাধীন মতামত হবে। আমরা কোনো মতামত কারও উপর চাপিয়ে দিতে পারি না, চাপিয়ে দেব না, সেই ধরনের কোনো ইচ্ছাও আমাদের নেই।”

বৈঠক শেষে সিইসি বলেন, “ইভিএমের ব্যাপারে অনেকের বক্তব্য ইতিবাচক, আবার অনেকে বলেছেন ইভিএম ব্যবহার করা সমীচীন হবে না। কিন্তু ইভিএমের অনেক বিষয় উনাদের অজানা ছিল, সেখানে আমাদের বিশেষজ্ঞরা বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলেছেন।

“আলোচনায় আর কেউ কেউ বলেছেন, পারলে ৩০০ আসনে প্রয়োগ করার যায় কি না? আর ৩০০ আসনে প্রয়োগ না করা গেলে আর নয়। কেউ কেউ ভাগে ভাগে করতে বলেছে।”

নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভায় ১০টি দলের ৪৮ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য দলগুলো হল- জাতীয় পার্টি-জেপি, বিএনএফ, এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, গণফ্রন্ট, মুসলিম লীগ, জাকের পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ।

আগামী ২১ জুন বিএনপিসহ ১৩টি দল এবং ২৮ জুন আওয়ামী লীগসহ ১৩টি দলের সঙ্গে বসার সময়সুচি রয়েছে ইসির।

ইভিএম নিয়ে আলোচনার পর ‘অন্য পলিটিক্যাল ইস্যু’ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে বসবে বলে জানান সিইসি।