তারেক-জোবাইদার মামলা: হাই কোর্টের আদেশ ২৬ জুন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ‘সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা বিবরণী দেওয়ার’ মামলা বাতিল প্রশ্নে রুল শুনানিতে তাদের আইনজীবী থাকতে পারবেন কি না, তা জানা যাবে আগামী ২৬ জুন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2022, 02:18 PM
Updated : 19 June 2022, 03:43 PM

রোববার এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের এক প্রশ্নের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ আদেশের ওই দিন ঠিক করে দিয়েছে।

আদালতে তারেক-জোবাইদার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান।

খুরশীদ আলম খান বলেন, “আমরা আদালতে বিভিন্ন নথিপত্র উপস্থাপন করে বলেছি- তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান পলাতক আছেন।”

তারেক রহমানের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “১/১১ এর সরকার কতগুলো মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করেছিল। ওইসব হয়রানি মামলার মধ্যে এটি একটি মামলা। সেই সময় তারেক রহমান বাংলাদেশে ছিলেন, আইনি সাহায্য চেয়েছেন। জামিন থাকা অবস্থায় তিনি দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন।

“সেই মামলা দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে… এমন বহু মামলা এখনও পেন্ডিং আছে, সেইসব মামলা না শুনে তারেক রহমানের এই মামলাটি শুনানির জন্য নেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “শুনানিতে আমরা বলেছি- তারেক রহমান আপিল বিভাগ পর্যন্ত বেইলে আছেন। বেইলে থাকলে কখনোই পলাতক হয় না।”

এর আগে গত ২৯ মে এ মামলায় রুল শুনানিতে 'দণ্ডিত ও পলাতক' থাকা অবস্থায় তারেক রহমান এ মামলার আইনি লড়াইয়ের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন কি না- আদালতে এমন প্রশ্ন রাখেন দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

ওই দিন আদালত জানায়, পলাতক আসামির পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে কি না, দুদকের এই প্রশ্নের বিষয়ে শুনানি নেওয়া হবে।

এরই মধ্যে গত ১ জুন জোবাইদা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায়ে সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিয়ে আপিল বিভাগ বলেছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাইকে সমান বলা হলেও জোবাইদা রহমানকে ‘অতিরিক্ত সুবিধা’ দেওয়া হয়েছিল।

এরপর গত ৫ জুন এক পলাতক আসামির পক্ষে হাই কোর্টে জামিন চাইতে গেলে পলাতক আসামিদের পক্ষে কোনো আবেদন না করতে আইনজীবীদের নির্দেশ দেয় বিচারপিত মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ।

এক যুগের বেশি সময় পর গত এপ্রিলের মাঝামাঝি তারেক-জোবাইদার এ মামলা রুল শুনানির জন্য হাই কোর্টের কার্য তালিকায় আসে। এরপর এ বিষয়ে শুনানির কয়েক দফা সময় নেয় তাদের আইনজীবী।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। সেখানে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

মামলায় তারেক রহমানকে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় জোবাইদা ও তার মায়ের বিরুদ্ধে। পরে একই বছর তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আলাদা রিট আবেদন করেন। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।

আসামিরা তখন মামলা বাতিলের আবেদন করলে হাই কোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয়। দীর্ঘ বিরতির পর রিট মামলাগুলো গত ১৯ এপ্রিল আবার শুনানির জন্য আসে।

এ মামলার বৈধতা নিয়ে আরেকটি ফৌজদারি আবেদন করেছিলেন ডা. জোবাইদা। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট।

সেই রুলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রুল খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট। একই সঙ্গে জোবাইদা রহমানকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছিলেন জোবাইদা রহমান। শুনানি শেষে গত ১৩ এপ্রিল আপিল বিভাগ জোবাইদার আবেদন খারিজ করে দিলে মামলা চালিয়ে নিতে আইনি বাধা কাটে। গত ১ জুন প্রকাশিত এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতেই জোবাইদাকে ‘অতিরিক্ত সুবিধা’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান মাহবুব আলী খানের মেয়ে জোবাইদা ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলেন। তার দুই বছর আগে তারেকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর আর কর্মস্থলে না ফেরায় ২০১৪ সালে জোবাইদাকে বরখাস্ত করে সরকার। তারা এখন সেখানেই থাকেন।

বিদেশে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তারেক, তার মা খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তিনিই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

এর মধ্যেই চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাজার রায় এসেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে দুই বছর, অর্থ পাচারের দায়ে সাত বছর, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং একুশে অগাস্টের গ্রেনেড মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন তারেক।