সব দল না এলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে, শুনতে হল ইসিকে

আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ চাইছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা; সেজন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ প্রত্যাশা করছেন তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2022, 02:24 PM
Updated : 13 June 2022, 04:06 AM

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি রোববার সাংবিধানিক সংস্থাটির সাবেকদের মতবিনিময়ের জন্য ডাকলে তাদের কাছে এমন বক্তব্যই শোনেন তারা।

আগামী সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নিয়ে যাত্রা শুরুর পর হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, তারা কাউকে ‘জোর করে’ নির্বাচনে আনতে পারবেন না।

তবে সংলাপে তাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, সব দলকে ভোটে আনতে আরও উদ্যোগী ভূমিকাই নিতে হবে ইসিকে।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি একাদশে এলেও এখন বলছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না।

এই প্রেক্ষাপটে রোববার ইসির মতবিনিময় সভায় সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, “আমাদের সময়ও বিএনপি ওয়াজ প্রোবলেমেটিক। অনেক সময় লাগছে আমাদের টেক দেয়ার কনফিডেন্স। আসতে চাননি, কিন্তু অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে।

“এখানে তো খুবই অ্যাডামেন্ট (অনড়) মনে হয়েছে, অন্তত যেসব কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছেন ওনারা কারেন্ট সিচুয়েশনে (নির্বাচনে) যেতে রাজি নেই।”

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গঠিত যে ইসির নেতৃত্বে শামসুল হুদা ছিলেন, তাদের নিয়েও সমালোচনা ছিল বিএনপির। তবে বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতি নন তিনি।

শামসুল হুদা বলেন, “আমি কমপ্লিকেটেড দেখতে পাচ্ছি। এবারের ইলেকশনটায় সব দল যদি না আসে, এটা কিন্তু গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং কীভাবে আনবেন, এটা আপনাদের দেখতে হবে, আপনাদের পাওয়ার অব পারস্যুয়েশন, আপনারা কী অফার করবেন, এটার উপর নির্ভর করছে।”

২০১৭-২০২২ সালে দায়িত্ব পালন করা সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, “সকলের প্রত্যাশা সুষ্ঠু নির্বাচন। তবে এজন্য সব দলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন প্রয়োজন হবে।”

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ‘নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা’ থাকা জরুরি। 

“আগামী জাতীয় নির্বাচনে একটাই চ্যালেঞ্জ। তা হচ্ছে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।” 

তবে বর্তমান কমিশনের শুরুর ভূমিকার প্রশংসা করে শামসুল হুদা বলেন, “(ভোটে আনার) ওই রকম পরিবেশ কিছুটা সৃষ্টি করতে পারলে (বিএনপি) তারা আসবে নির্বাচনে, আমার ধারণা। এখন পর্যন্ত আপনাদের কথাবার্তা আচার-আচরণ দেখছি, এখনকার কার্যকলাপ নিয়ে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করছে না।”

সেনা মোতায়েনের দরকার নেই

নির্বাচনে কোনো কাজে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ‍যুক্ত করার বিপক্ষে বলেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় সিইসির দায়িত্বে থাকা কে এম নূরুল হুদা।

তিনি বলেন, “নির্বাচনে সেনাবাহিনীর একেবারেই দরকার নেই। কারণ বিগত নির্বাচনগুলোয় নির্বাচন পরিচালনায় তারা কোনো কাজে আসছে বলে মনে হয় না। প্রতিরক্ষায়, সার্বভৌমত্বের দায়িত্বে নিয়োজিত এলিট ফোর্স সেনাবহিনীকে নির্বাচনের মাঠে নামানোর দরকার নেই। আসলেই কোনো কাজে আসে না।”

ইসির চ্যালেঞ্জ স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে যতই স্বাধীন বলুন না কেন, কিছু কাজ সরকারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আচরণবিধি মানার ক্ষেত্রে কমিশনকে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।’

৯০ এর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফেরার কালে সিইসির দায়িত্ব পালনকারী বিচারপতি আব্দুর রউফ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করেন। সেই সঙ্গে প্রতি ৫০০ ভোটারের জন্য একটি কেন্দ্র করার প্রস্তাব রাখেন।

তবে বিদ্যমান আইন-বিধিতে ভালো নির্বাচন সম্ভব মন্তব্য করে আইন সংস্কারে হাত না দেওয়ার পরামর্শ দেন শামসুল হুদা।

“মৌলিক কিছু করতে যাবেন না। আইন বিধি-পরিবর্তন কিছু করে আমরা পারবো না। আইন-কানুন যা আছে এ যথেষ্ট সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। ২০০৮ এর নির্বাচন করেছি এ আইনের মধ্যে, আমাদের তো কোনো অসুবিধা হয় নি। আরামসে করা গেছে। …আমরা চাই সুন্দর নির্বাচন হোক।”

জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হওয়ার দক্ষতা ইসির সব নিজস্ব কর্মকর্তার নেই মন্তব্য করে প্রশিক্ষণে জোর দেন শামসুল হুদা।

মতবিনিময় সভায় তিন সিইসি ছাড়াও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ, মোহাম্মাদ আবু হাফিজ, সাবেক ইসি সচিব মোহাম্মাদ সাদিক, মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও মোখলেছুর রহমান অংশ নেন।

বর্তমান ইসির চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব উপস্থিত ছিলেন।

অংশগ্রহণমূলক না হলে গ্রহণযোগ্য হবে না: সিইসি

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।

সাবেকদের সঙ্গে সংলাপ শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “সবাই চান অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। ইনক্লুসিভ না হলে সে নির্বাচন বাস্তব অর্থে গ্রহণযোগ্য হবে না।”

আলোচকদের মতামত তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা বলেছেন- রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেক নষ্ট হয়ে গেছে। এ ইতিবাচক গুণ বিশেষ করে পরম সহিষ্ণু, ঐকমত্য না থাকলে ইসির একার পক্ষে ভালো নির্বাচন সম্ভব হবে না। ভোটার, দল সবার মধ্যে সমঝোতা ও ঐকমত্য না থাকলে ভালো হবে না।

বর্তমান আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামোয় নির্বাচন করতে হবে বলে যে পরামর্শ এসেছে, সে বিষয়ে সিইসি বলেন, “ব্যক্তির চেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ হল সিস্টেম। সিস্টেম ভালো হলে যে কাউকে বসিয়ে দিলে মেশিনটি অনেক ভালো কাজ করবে।”

সাবেক সিইসি ও ইসির সঙ্গে আলাপ করলেও গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি বলে জানান সিইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেই পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে চান তারা।

“ঐকমত্য হয়নি। আমরা এখনও আলাপ করছি, শুনেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে। সহসাই এ সংলাপ শুরু করতে পারব আশা করি।”