‘ডলার পাচারকারী’, ‘আশীর্বাদপুষ্টদের’ জন্যই এ বাজেট: বিএনপি

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘বাস্তবতা বর্জিত’ মন্তব্য করে বিএনপির অভিযোগ, এটা সাধারণ মানুষের বাজেট নয়- শুধু সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই এটি করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2022, 03:03 PM
Updated : 11 June 2022, 03:22 PM

শনিবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে এমন প্রতিক্রিয়া দেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এর দুই দিন পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে এল বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “এই বাজেট কোনো অর্থেই সাধারণ মানুষের বাজেট নয়। এটা স্রেফ ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট।

“এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ বাস্তবতা বর্জিত একটি বাজেট, এটি কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “পাচারকারীরদের অর্থকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা কিংবা বিদেশে ভোজ করার বৈধ্যতার জন্যই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আরও পরিষ্কার অর্থে বললে সরকারের লুটেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী স্বজনদের অর্থপাচার করার সুযোগ করে দিতেই এটা করা হয়েছে।

“অথচ সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহৃত চাল, ডাল, লবণ, চিনি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য হ্রাসের কোনো কার্য্করী কৌশল না নিলেই শুধুমাত্র নিজেদের বিত্ত বৈভব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই বাজেট প্রণীত হয়েছে।“

‘পাচার করা অর্থ’ দেশে ফেরাতে ‘কর ছাড়ের’ প্রস্তাবকে আইনের পরিপন্থি অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘‘এ প্রস্তাব কেবল অনৈতিক নয়, এটা রীতিমত আইনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে ক্ষমা ঘোষণার শামিল। এতে বর্তমানে চলমান অর্থপাচারের মামলাগুলোর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অর্থ পাচারকারীরা আরও উৎসাহিত হবে, টাকা আরও পাচার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে।এটা অন্যায়, অপরিনামদর্শী ও আত্মঘাতী পদক্ষেপ।”

তিনি বাজেটে এ ঘোষণার ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়ে তা বাতিলের দাবি জানান।

একই সঙ্গে অবিলম্বে পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং পাচারকারীদের অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই বাজেট হচ্ছে অব দ্য বিজনেস ম্যান, বাই দ্য বিজসেন ম্যান এবং ফর দ্য বিজনেস ম্যান। অর্থাৎ এটি ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট। জনকল্যাণের কোনো কথা এতে স্থান পায়নি। মূল্যস্ফীতিতে জনমানুষের যখন নাভিশ্বাস, তাদেরকে স্বস্তি দেওয়ার কোনো কিছু নেই।

“করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি, স্বস্তি পায়নি মধ্যবিত্তরা।বাজেটে যেসব পণ্যের আমদানি কর বাড়ানো হয়েছে সেগুলোর ভোক্তা মূলত: মধ্যবিত্তরাই।”

তিনি বলেন, “মেডিটেশনের উপরও ৫% কর আরোপ করা হয়েছে। অতিদরিদ্রদের কাছে ১০ টাকা দরে যে সামান্য কিছু চাল বিক্রি হত তার দাম ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সয়াবিন তেল এখন সরকারই নির্ধারণ করে দিল ২০৫ টাকা। ৩৫ দিনের মাথায় এ নিয়ে দুই দফা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল।”

সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিখাতে ব্যয় বরাদ্ধ যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই বলেও অভিযোগ তার।

কোভিড মহামারীকালীন দেওয়া প্রণোদনার অর্থ কারা পেয়েছে এবং এ পর্যন্ত কি পরিমাণ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে তা নিয়ে ‘সরকারের শ্বেতপত্র’ প্রকাশের দাবি জানান তিনি।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ সবই গতানুগতিক। করোনাকালে এ খাতে যেসব দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে সেগুলো পূরণের জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ দিক নির্দেশনা বাজেটে নেই।”

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “এই মুহূর্তে মুক্তবাজার অর্থনীতি কাজ করছে না বাংলাদেশে। এখন কাজ করছে আওয়ামী ইকোনমিক মডেল, তাদেরকে উপকার করার জন্য, তাদের দুর্নীতির জন্য, তাদের পকেটে টাকা নেওয়ার জন্য, তারা রাষ্ট্রের প্রেট্টোনাইজেশনের ব্যবসা করার জন্য। এভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিটা চলছে।”

সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান ও নাসের রহমান উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: