শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক।
হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে শুক্রবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা। পরে তার চিকিৎসায় গঠিত বোর্ডের সিদ্ধান্তে শনিবার এনজিওগ্রাম করা হয়।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন,তার হৃৎপিণ্ডের ব্লক অপসারণ করে সফলভাবে একটি ‘স্টেন্ট’ বসানো হয়েছে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দিতে বিএনপির দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সরকার কী জন্য দায়-দায়িত্ব নেবে? তিনি কী মির্জা ফখরুল সাহেবের আন্দোলনে মুক্ত আছেন?
“এটা শেখ হাসিনার উদারতা ও মানবিকতায় মুক্ত আছেন তিনি। বাসায় থাকার অধিকার পেয়েছেন। চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো বাধা নেই। তাদের এতো যদি ইচ্ছা হয় দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসক আনুক। অসুবিধা তো নাই।”
বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের বলেন, “এই ব্যাপারে আমি বলতে চাই না। এটা স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় দেখভাল করছে।”
এসময় কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর ঠেকানো যাচ্ছে না এবং তারা পরিবারিক কাজে সরকারি যানবাহন ব্যবহার করছেন জানিয়ে এমন অপচয় রোধে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটা বাজেটে কেন? প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন...
“যার ইচ্ছা সে বিদেশে চলে যাবে, এটা মন্ত্রী হোক বা কর্মকর্তা হোক, কারো ব্যাপারে এটা আর উৎসাহিত করা হবে না”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের অনেক টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে, করের মাধ্যমে এ ফেরত আনতে সরকার সুযোগ করে দিয়েছে। এর সুফলটা বাংলাদেশ পেতে পারে।”
করের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ঘোষণায় পাচারকারীরা আরও উৎসাহিত হবে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এটা ঠিক সেইভাবে দেখলে হবে না। দেশের অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে।
“অন্যান্য দেশে এই ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। আমরা সেই সুযোগটা দিচ্ছি। আমরা দেখি, যদি এই সুযোগের সুফল না আসে তাহলে আমরা সুযোগটা উঠিয়ে নেব। এই বাজেটের দেওয়া সুযোগে আমরা সুফল পেতে পারি।”
এই ইস্যুতে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুলসহ দেশের একটি চিহ্নিত মহল ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে।
“তাদের বক্তব্য যদি সত্য হিসাবেই ধরে নেই, তাহলে সাত শতাংশ কর দানের মাধ্যমে কেউ টাকা দেশে নিয়ে আসে, তাহলে মির্জা সাহেবদের খুশি হওয়ার কথা। এখন কেন তারা অভিযোগ করছে?
“অর্থপাচারের অভিযোগ তুলবেন, আর যখন টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেবে, তখনও অভিযোগ করবেন, সেটা তো আপনাদের দ্বিচারিতা।”
ক্ষমতায় থাকার সময় ৩৪ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুইবার কালোটাকা সাদা করেছেন বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
“বাংলাদেশের মানুষ জানে, কারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে। পাচারকারী হিসাবে আপনাদের বিশ্ব রেকর্ড।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের নাম আওয়ামী লীগ নেতারা সম্মানের সঙ্গে উচ্চারণ করেন দাবি করে তিনি বলেন, “আমার উচ্চারণ করি বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু তারা (বিএনপি) বলে, হাসিনা তুই। পঁচাত্তরের কথা বলে হত্যার হুমকি দেয়।
“আমরা কখনও খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাস্তার ভাষায় সম্বোধন করি না। তারা রাস্তায় ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ, দীপু মনি, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।