পলাতক জোবাইদার আবেদনে শুনানি করা যাবে না: আপিল বিভাগ

সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2022, 03:43 PM
Updated : 1 June 2022, 05:24 PM

এর ফলে আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত জোবাইদার পক্ষে আদালতে কোনো আবেদন করা হলে তার উপর শুনানি করা ‘আইনসম্মত হবে না’; যা হাই কোর্ট করেছিল।

এ মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে গত ১৩ এপ্রিল যে রায় আপিল বিভাগ দিয়েছিল, বুধবার প্রকাশিত তার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত এসেছে।

দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায়ে বলা হয়েছে, আসামি পলাতক থাকলেও তাকে পলাতক না দেখিয়ে (হাই কোর্টে) মামলার শুনানি করাটা আইনসিদ্ধ হয়নি, বেআইনি হয়েছে।

“রায়ে বলা হয়েছে, পলাতক আসামি দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টে কোনো আবেদন করতে পারবেন না, জোবাইদা রহমান ২০০৮ সাল থেকেই পলাতক হিসেবে গণ্য হবেন।”

নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান মাহবুব আলী খানের মেয়ে জোবাইদা ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলেন। তার দুই বছর আগে তারেকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর আর কর্মস্থলে না ফেরায় ২০১৪ সালে জোবাইদাকে বরখাস্ত করে সরকার। তারা এখন সেখানেই থাকেন।

বিদেশে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তারেক, তার মা খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তিনিই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

এর মধ্যেই চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাজার রায় এসেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে দুই বছর, অর্থ পাচারের দায়ে সাত বছর, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং একুশে অগাস্টের গ্রেনেড মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন তারেক।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান (ফাইল ছবি)

যে মামলায় জোবাইদাকে পলাতক ঘোষণা করা হল, সেটি দায়ের করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে, ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। তার স্বামী তারেক রহমান এবং মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুও এ মামলার আসামি।

কাফরুল থানায় দায়ের করা এ মামলায় ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় তারেকের বিরুদ্ধে। আর তাকে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় জোবাইদা ও তার মায়ের বিরুদ্ধে।

২০০৮ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। এরপর জোবাইদা রহমানের মামলা বাতিলের আবেদনে হাই কোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয়।

২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল সেই রুল খারিজ করে রায় দেয় হাই কোর্ট। তাতে মামলা চলার বাধা কাটে। আট সপ্তাহের মধ্যে জোবাইদা রহমানকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন জোবাইদার আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্ব আপিল বিভাগ গত ১৩ এপ্রিল তা খারিজ করে রায় দেয়। তাতে দুদকের মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।

সেদিনের সংক্ষিপ্ত রায়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা না হলেও বুধবার ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিয়ে আপিল বিভাগ বলেছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাইকে সমান বলা হলেও জোবাইদা রহমানকে ‘অতিরিক্ত সুবিধা’ দেওয়া হয়েছিল।

আপিল বিভাগের রায়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জোবাইদার আইনজীবী ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, “আমরা আপিল বিভাগের এ রায়ের অনুলিপি পাইনি, যেহেতু আমরা অনুলিপি পাইনি, সেহেতু এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।”

আরও পড়ুন