তথ্য গোপন: হাজী সেলিমের শাস্তি চেয়ে দুদকের আপিল

হাই কোর্টের রায়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজী মো. সেলিমের ১০ বছর কারাদণ্ড হলেও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছিলেন তিনি, এখন সেই অভিযোগে তাকে শাস্তি আওতায় আনার লক্ষ্যে আপিল করেছে দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2022, 01:06 PM
Updated : 10 May 2022, 01:06 PM

হাজী সেলিম। ফাইল ছবি

দণ্ডিত এই সংসদ সদস্যের সাম্প্রতিক বিদেশ গমন নিয়ে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল আবেদন করার খবর জানান দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

জরুরি অবস্থার সময়কার দুর্নীতির এক মামলায় হাই কোর্ট গত বছরের ৩ মার্চ আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে একটি ধারায় অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ায় ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। সেই সঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এই মামলায় বিচারিক আদালতও এই ধারায় একই রায় দিয়েছিল। সেই সঙ্গে সম্পদের তথ্য গোপনের অপরাধে আরেকটি ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল।

কিন্তু হাই কোর্টের রায়ে সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় তিন বছরের সেই সাজা বাতিল করে খালাস দেওয়া হয় হাজী সেলিমকে।

হাই কোর্টের ওই রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ১০ বছর দণ্ডিত হাজী সেলিমকে বিশেষ জজ আদালত-৭ এ আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

অন্যদিকে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ থেকে হাজী সেলিমের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এরমধ্যে গত ৯ ফেব্রুয়ারি এ মামলার হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

তবে হাই কোর্টের এ রায়ের পর যে অভিযোগ থেকে হাজী সেলিম খালাস পেয়েছেন এর বিরুদ্ধে আপিলের জন্য ‘ফাইল জমা দেওয়া হয়েছিল’ বলে জানান দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “হাই কোর্টে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ থেকে হাজী সেলিমকে খালাস দেওয়া হয়, এর বিরুদ্ধে আমরা আজকে আপিল করেছি।”

এদিকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ থাকলেও ঈদের আগে গত ৩০ এপ্রিল তিনি বিদেশ গেলে তার পালানোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এ আলোচনার মধ্যে ৫ মে তিনি থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেন।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।

২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালতের রায়ে তাকে মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আর জ্ঞাত আয় সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার দায়ে হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

পরে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাজী সেলিম ও তার স্ত্রী গুলশান আরা বেগম এ রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাই কোর্ট ১৩ বছরের সাজা বাতিল করে রায় দেয়।

হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাই কোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়।

সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাই কোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

এরপর এ আপিলের শুনানি শেষে গত বছরের মার্চে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায় আসে হাই কোর্ট থেকে। অন্যদিকে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে দণ্ডিত হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমের আপিল বাতিল করা হয়।