বন্ধু মুহিতকে নিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইদুজ্জামান: ‘হাতের সেই পরশ এখনও নাড়া দেয়’

প্রিয় বন্ধুর হাতে হাত রেখে বেশ কিছুক্ষণ বসেছিলেন গত শনিবারও; সপ্তাহ না ফুরোতেই না ফেরার দেশে চলে যাওয়া ‘সেই বন্ধুর’ হাতের সেই পরশ এখনও নাড়া দিচ্ছে আরেক বন্ধুকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2022, 01:06 PM
Updated : 1 May 2022, 03:30 AM

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এই দুই বন্ধু পরে অর্থমন্ত্রীও হয়েছিলেন। সরকারি চাকরিতে সহকর্মীও ছিলেন।

তাদেরই একজন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জানাজায় এসে বন্ধুর চির বিদায়ের সময় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নিজের কষ্টের-অনুভূতির কথা জানালেন আরেক সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান।

শনিবার সকালে গুলশানের আজাদ মসজিদে আমলা থেকে রাজনীতিতে নাম লেখানো মুহিতের জানাজায় অংশ নিতে এসেছিলেন সব শ্রেণি পেশার মানুষই।

সেখানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাইদুজ্জামান বলেন, “গত সপ্তাহে শনিবার তাকে (আবুল মাল আবদুল মুহিত) দেখতে তার বাসায় গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে তাকিয়ে থাকলো। কথা বলতে পারলো না।

“আমি তার হাত ধরলাম কতক্ষণ। সে কথা বলতে পারল না। তার হাতের সেই পরশ এখনও আমাকে নাড়া দেয়।”

সাবেক এই দুই অর্থমন্ত্রীর বন্ধুত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই। দু’জনই সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। সেই বন্ধুত্বের বন্ধনে কখনও ছিন্ন হয়নি বলেন জানান সাইদুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এক সাথে আমরা বন্ধু ছিলাম, বহু বছরের পরিচয় আমাদের। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত সলিমুল্লাহ হলে ছিলাম। মুহিত পড়তেন ইংরেজিতে আর আমি পদার্থবিদ্যা বিভাগে। ও আইএতে ফার্স্ট হল, আমি আইএসসিতে ফার্স্ট হলাম একই বছরে। বলতে পারেন সারা জীবনের বন্ধু ছিলাম আমরা।

“মুহিত পড়ত এমসি কলেজে আর আমি পড়েছি ঢাকা কলেজে। পরে ৫৬ সালে আমরা দুইজন একসাথে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হই। বন্ধুত্বে অনেক মেলবন্ধন ছিল আমাদের মধ্যে।”

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান

বন্ধুত্বের মত তাদের নীতিতেও অনেক মিলের কথা জানালেন সাইদুজ্জামান। মতের ও নীতির মিল না হওয়ায় দু’জনই এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। মুহিত পরে উন্নয়ন সংস্থা ঘুরে রাজনীতিতে এলেও সাইদুজ্জামান অধ্যাপনায় মনোনিবেশ করেন।

আওয়ামী লীগের বিগত দুই সরকারের পাশাপাশি আশির দশকের এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন মুহিত। মুহিতের পর এরশাদ সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে এসেছিলেন সাইদুজ্জামান।

এরশাদের আমলে মন্ত্রিসভায় মুহিতের যোগদানের কথা উল্লেখ করে সাইদুজ্জামান বলেন, “এরশাদ সাহেব যখন রাষ্ট্রপতি হলেন তখন মুহিত জয়েন করল ফাইন্যান্স মিনিস্টার হয়ে। তবে...  কম সময় ছিল।

“আমি ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকে ছিলাম, সেখান থেকে ফিরে এলাম ১৯৮২ সালের অক্টোবরে। আসার পর এরশাদ আমাকে বললেন যে, আপনাকে তো অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে হবে। এর আগে ওয়াশিংটন যাওয়ার আগের পাঁচ বছর আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি ছিলাম…।”

সেই সময়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইদুজ্জামান বলেন, “রুলস অব বিজনেস আর পলিসি অনুযায়ী সরকারকে উপদেশ দেওয়া- এটাতে আমাদের (মুহিতের সঙ্গে) মধ্যে অনেক মিল ছিল। কারণ আমরা পাবলিক সার্ভেন্ট ছিলাম দীর্ঘদিন। পরে অবশ্যই মুহিত রাজনীতিতে চলে গেল।

“তবে আমরা সরকারের নীতি মেনে চলতাম। দেখুন আমি কখনও রাজনীতি করিনি। আমি এরশাদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলাম কারণ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নীতিগত বিষয়ে আমি তার সাথে একমত হতে পারিনি।”

১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত। তারপর দীর্ঘদিন বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ওয়াশিংটন দূতাবাসে মুহিত কাজ করতেন বলে জানান সাইদুজ্জামান।