ভোট জোট বেঁধে, বললেন ১৪ দলের নেতারা

আগামী বছর অনুষ্ঠের সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশ নেবে ১৪ দল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2022, 02:58 PM
Updated : 15 March 2022, 02:58 PM

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাড়ি গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জোটের শীর্ষনেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসে।

ক্ষমতাসীন দল নেতৃত্বাধীন এই জোটের নেতারা তিন বছর পর এমন বৈঠকে বসলেন।

বৈঠক শেষে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সংবাদিকদের বলেন, “খুবই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। বহুদিন পরে আমরা একটা ভালো আলোচনা হয়েছে।”

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, “বিএনপির আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৪ দল মাঠে নামবে। সারা দেশে ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ শুরু করা হবে।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ১৪ দলগতভাবে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ভিত্তিতে যে ঐক্যজোট, তার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে।”

জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, “জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হবে, এটা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।”

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “বাংলাদেশে এখনও রাষ্ট্রের চিরশত্রু, সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী এবং সন্ত্রাসী শক্তি রাষ্ট্রের মূলভিত্তিতে হামলা ও আঘাত করছে। আমরা তাই মনে করি, এখনও ১৪ দল রাখার প্রয়োজন রয়েছে। একইভাবে জোটকে মাঠ পর্যায়ে রাজনৈতিকভাবে কার্যকর করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”

বিএনপি নির্বাচনে না এলেও ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করবে কি না, সাংবাদিকরা সেই প্রশ্নও করেন জোটটির নেতাদের।

জবাবে মেনন বলেন, “ওই বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। বিএনপি নির্বাচনে আসবে না, সেটা আমরা জানি।”

আপনি যে বিভিন্ন সময় জনগণের ভোটের নিশ্চয়তা দাবি করেছিলেন, সেই বিষয়ে কী আলোচনা করেছেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “একেবারে স্পষ্টভাবে বলেছি, গত ইউপি নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে যে প্রশ্নগুলো এসেছে, জনগণের ভোটদানের অধিকারের যে প্রশ্নটি এসেছে, এই ব্যাপারটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন- জানতে চাইলে মেনন বলেন, “নেত্রী কি সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন?”

বিএনপি ভোটে না এলে জোটগত নির্বাচন হবে কি না- সে প্রশ্নে মঞ্জু বলেন, “জোট থাকবে।”

তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিএনপির বিকল্প হিসেবে অসাম্প্রদায়িক দলের উত্থান প্রত্যাশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

“প্রধানমন্ত্রী বিএনপি সম্পর্কে বলেছেন, তারা একটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্র জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ।

“তাই তিনি চান আওয়ামী লীগের বিকল্প একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হোক। সেইভাবে তিনি ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোকে যার যার দলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করবার তাগিদ দিয়েছেন।”

জোটে বড় দল আওয়ামী লীগের সমালোচনা নানা সময়ে করে আসছেন অন্য দলগুলোর নেতারা। সরকারের নানা পদক্ষেপেও ভিন্নমত জানাচ্ছেন তারা।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, “আমরা বলেছি সরকারের সঙ্গে ১৪ দলের সম্পর্কে যে প্রশ্নটা আছে, সেটাও আপনার নির্মূল করতে হবে।

“কারণ সব ব্যাপারে আমরা একমত নই। সব ব্যাপারে আমরা মেনে নিই, ব্যাপারটা এরকম না।”

জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, “সরকারি দলের কাছে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়নি।

“তেল, গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম যেন বৃদ্ধি না করা হয়, সেই বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা হয়েছে। দূর্গাপূজা ও সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতরা যেন কোনো অবস্থায় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ছাড় না পায় এবং দ্রুত বিচারের সম্মুখীন হয়, এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।”

জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান মঞ্জু বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে বলেছেন, নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বপ্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

আমু বলেন, “করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রম ও ভূমিকার প্রশংসা করেছে ১৪ দল।”

ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘ভারসাম্যমূলক’ নীতি অবলম্বনকে সমর্থন করছেন বলে জানান বাম নেতা মেনন।

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এটা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। শুধু রাশিয়া-ইউক্রেইন না, সামগ্রিক।”