‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা পেয়েছেন খালেদা, সাড়ে ৩ বছর পর জানাল বিএনপি

কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামের একটি সংগঠন খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা দিয়েছে বলে সাড়ে তিন বছর পর জানাল তার দল বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2022, 01:51 PM
Updated : 8 Feb 2022, 03:31 PM

মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডার ওই সংগঠনের দেওয়া ক্রেস্ট ও সনদ সাংবাদিকদের দেখান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে সন্ধ্যায় তিনি গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে তার হাতে ওই সম্মাননাপত্র পৌঁছে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আপনাদের জানাতে চাই, কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গাইনাইজেশন, তারা গণতন্ত্রের প্রতি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসামান্য অবদান এবং তিনি যে এখনো গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্যে কারাবরণ করছেন, অসুস্থ অবস্থায় গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন, এসব কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি দেশনেত্রীকে মাদার অব ডেমোক্রেসি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে।”

যে সম্মাননা সনদ সংবাদ সম্মেলনে দেখানো হয়েছে, তাতে লেখা ছিল সিএইচআরআইওর ট্রিলিয়াম অ্যাওয়ার্ড হিসেবে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

এত দিন পর কেন বিএনপি সেই পুরস্কারপ্রাপ্তির খবর প্রকাশ করছে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর কারণটা হচ্ছে, এই সম্মাননা যখন দেওয়া হয় তখন ম্যাডাম জেলে ছিলেন দুই বছর। তারপর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন কয়েকবার। এখন উনি বাসায় এসেছেন। আমরা তাকে এই সন্মাননার কথা জানিয়েছি। আপনাদেরকেও জানলাম।”

ঢাকায় কানাডীয় হাই কমিশনও বিষয়টিকে ‘এন্ডোর্স করেছে’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তবে এ বিষয়ে কানাডীয় হাই কমিশনের বক্তব্যও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।

কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, টরন্টোভিত্তিক এ সংগঠন ২০০৩ সাল থেকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে আসছে। তবে তাদের ওয়েবসাইটে খালেদা জিয়ার বিষয়ে কিছু পাওয়া যায়নি।

তবে গুগলে খুঁজলে দেখা যায়, পিস অ্যান্ড জাস্টিস অ্যালায়েন্স নামে আরেকটি সংগঠনের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার সম্মননা পাওয়ার ওই খবর দেখা যায়। সেখানে বলা হয়, কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের কাছ থেকে ২০১৮ সালের ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

এই পিস অ্যান্ড জাস্টিস অ্যালায়েন্সের একজন পরিচালক হলেন মোহাম্মদ মোমিনুল হক নামের এক ব্যক্তি, যিনি আবার কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের এশিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক।

কানাডা বিএনপিতে সক্রিয় মোমিনুল হক নিজেকে একজন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হিসেবে পরিচয় দেন। ফেইসবুকে তিনি সক্রিয় ‘মিলন হক’ নামে। সেখানে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এবং বর্তমান সরকারের বিরোধিতায় নিয়মিত পোস্ট দিয়ে আসছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলায়ও তার সাজা হয়।

দুই বছর কারাবাসের পর বিশেষ শর্তে সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এরপর থেকে তিনি গুলশানের বাসায় আছেন। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে তিন দফা হাসপাতালেও যেতে হয়েছে তাকে।

খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বিএনপির নেতারা তাদের চেয়ারপারসনকে বিভিন্ন সময়ে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ বলে আসছিলেন। মির্জা ফখরুলও বিভিন্ন সময়ে তার বক্তৃতায় তাদের নেত্রীকে ওই ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। 

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও উপস্থিত ছিলেন।