জোটে ‘এগোতে গেলেই’ কোভিড ‘হাজির হয়’: ফখরুল

জোটের রাজনীতিতে ‘এগোতে গেলেই’ কোভিড এসে ‘হাজির হয়’ মন্তব্য করে নেতা-কর্মীদের টিকা নিয়ে এ বাধা অতিক্রমের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2022, 12:40 PM
Updated : 27 Jan 2022, 12:40 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের মধ্যে করোনা তো প্রায় অনেকেরই হয়ে গেছে। আবারও বলতে চাই, এটাকে একেবারেই কেউ হালকা করে দেখবেন না। ওমিক্রন এসেছে…। সাবধানে থাকবেন।”

দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সম্প্রতি নিজেও আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠেন বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল বলেন, “দেখবেন যে, যারা খারাপ লোক, এদের সমর্থনে কিছু ঘটে। কিন্তু এটা সাময়িক ব্যাপার। ওমিক্রনটাও ওদেরকে…।”

এসময় জোটের রাজনীতি নিয়ে সক্রিয়ভাবে এগোতে গেলেও বারবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে নেতা-কর্মীরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

“যখনই আমরা একটা জোট-টোটে আগাতে যাই তখনই করোনা ভাইরাস, কোভিড-১৯ এসে হাজির হয়। সবাই ভ্যাকসিন নিয়ে নেন। এটাকে অতিক্রম করার সাহস করতে হবে আপনাদের।”

সরকার পরিবর্তনের দাবিতে ‘সঠিক সময়ে’ আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার আভাস দিয়ে নেতা-কর্মীদের এজন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আমি খুব আশাবাদী হয়ে উঠেছি। কারণ আমাদের জেলা ও বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে, আপনাদের ঢাকার যে সমাবেশগুলো হয়েছে এতে জনগণ বেরিয়ে আসছে, বেরিয়ে আসবে।

“সঠিক সময়ে সঠিকভাবে আমাদেরকে ওই ধরনের কর্মসূচি নিয়ে আসতে হবে যেন সরকার বাধ্য হয় বেরিয়ে যেতে। আমরা পরিস্কারভাবে শপথ নিতে চাই, আর এদেশে কোনো বাকশাল হতে দেওয়া হবে না।”

ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তর-দক্ষিণ শাখার যৌথ উদ্যোগে ‘বাকশাল: গণতন্ত্র হত্যার কালো দিবস’ পালন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

“শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব যে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেছেন সেটাকে প্রতিষ্ঠার জন্য, সেটাকে রক্ষা করার জন্য আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে এদেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করব ইনশাল্লাহ।”

‘বাকশাল বাংলাদেশের আত্মাকে হত্যা করেছে’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ক্রিয়েশন অব বাকশাল, বাকশাল তৈরি করাটা ছিল বাংলাদেশের আত্মাকে হত্যা করা, বাংলাদেশের জাতির আত্মাকে হত্যা করা। কারণ আমাদের জাতিসত্ত্বা সবসময় একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চেয়েছে।

“আমরা একটা গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করতে চেয়েছিলাম। দেশের ইতিহাস বহু আগ থেকে লক্ষ্য করে দেখেন-এদেশের মানুষ স্বাধীনচেতা মানুষ। ঢাকার বারো ভুঁইয়া, ঈসা খাঁ, সূর্য সেন- এই সমস্ত মানুষের কথা আপনারা জানেন।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সেই স্বাধীনতার জায়গাটাতে আঘাত করতে চেয়েছিল। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিল, অর্থাৎ বহুদলীয় ব্যবস্থাটার যে মূল কথাটা সেটাকে তারা উড়িয়ে দিল এই একদলীয় ব্যবস্থা বাকশাল করে।

“কোনো পত্রিকা চলবে না, চারটা পত্রিকা থাকবে তাও সরকারের নিয়ন্ত্রণে। কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে তথাকথিত তাদের ভাষায় রাষ্ট্র মানে এক নেতা, এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। মুজিববাদ ছাড়া কোনো বাদ থাকবে না, কথা থাকবে না।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “যারা আমরা ভিন্নমত চিন্তা করতাম। ওই সময়ে হাজার হাজার মানুষ কারাগারে গেছে, হাজার হাজার তরুণ-কিশোর তারা নিহত হয়েছে। অস্বীকার করতে পারবে কী করে? ইনুই (হাসানুল হক ইনু) তো সাক্ষী।

‘‘এই এখন যেমন আমাদের বহু তরুণ-যুবকেরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন। মামলা-মোকাদ্দমা বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে… । তখনও কিন্তু একইভাবে হাজার হাজার তরুণ-কিশোর বিদেশে চলে গিয়েছিল। তারা জার্মানি, ইউরোপে আছেন এখন।

“বাকশাল আমাদের জন্য একটা ত্রাস হয়ে সামনে এসেছিল। লাল ঘোড়া …। একটা নতুন বাহিনী তৈরি করা হল সেনাবাহিনীর ওপরে আস্থা না রাখার কারণে রক্ষী বাহিনী। একই রকম পোশাক, কালোটালো পোশাক পরা।”

বাকশালে যোগ দেওয়ার জন্য সকল পেশাজীবীদের সেসময় বাধ্য করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, সাংবাদিকদের বাধ্য করা হয়েছিল। সেনাবাহিনীকে যোগ দিতে হবে, সকল কর্মচারীদের যোগ দিতে হবে, অর্থাৎ আর কারো অস্তিত্ব থাকবে না বাকশাল ছাড়া। এটাই করেছিল, আপনারা ভুলে যাচ্ছেন কী করে?”

তিনি বলেন, “আজকের দিনের সাথে বাকশাল শাসনামলের খুব মিল আছে। আমি গত ১০ বছর যাবত আমি এটা বলি সবসময়, প্রায়ই বলি- এখন বাকশালটা নাই, একটা নতুন মোড়ক আছে, গণতন্ত্রের মোড়ক।

“উপরে একটা গণতন্ত্রের লেবাস, আলখেল্লা আছে। ভেতরে পুরো বাকশাল। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। একদলীয় শাসনব্যবস্থা তারা করতে চায় এটা তাদের অন্তরের বাসনা, এটা তাদের চিন্তা-ভাবনা।”