কিছু ভিসি সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের খেপিয়ে তুলছে: ইনু

দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা শিক্ষার্থীদের ‘সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছেন’ বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2022, 08:16 AM
Updated : 26 Jan 2022, 10:55 AM

বুধবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় ইনু বলেন, “কিছু সমস্যা যা কাঁটার মত পায়ে বিঁধছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের কারও কারও কাণ্ডজ্ঞানহীন কথাবার্তা, আচার-আচরণ দুঃখজনক।

“ভাব দেখে মনে হচ্ছে, কতিপয় ভিসি সাহেবরা ছাত্র-ছাত্রীদের সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার মিশনে নেমেছে। এটা দুঃখজনক। এ ব্যাপারে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।”

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোট শরিক জাসদের সভাপতির এমন বক্তব্য এল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। এর জেরে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হন।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

একপর্যায়ে ঘোষণা দেন উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার। টানা সাতদিন অনশনের পর বুধবার অনশন ভাঙেন আন্দোলকারীরা।

হাসানুল হক ইনু, ফাইল ছবি

ওই আন্দোলন চলার মধ্যেই শাবি ভিসির বক্তব্যের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জাহাঙ্গীরনগরেও তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। পরে ওই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চান অধ্যাপক ফরিদ।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে উপাচার্যদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। ফলে তাদের কুকর্মের দায় তার উপরও এসে পড়ে। কিন্তু এই উপাচার্যরা কি ধরনের স্বৈরশাসক, দুর্নীতিবাজ হয়ে ওঠেন, চাকরি বাণিজ্যে লিপ্ত হন তার উদাহরণ আমরা দেখেছি।

“বর্তমানে তারা সকলে মিলে শাহজালালের উপাচার্যের জন্য দল পাকিয়েছেন। এটা যেমন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের জন্য বিব্রতকর, তেমনি সরকারের জন্যও বিব্রতকর। এ কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি হিসাবে আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে সার্চ কমিটির বিধানের কথা বলেছিলাম। এতে হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্ত্বশাসন ক্ষুণ্ন হবে বলে কথা উঠবে।”

মেনন বলেন, “শেষ বিচারে তারা ওই স্বায়ত্বশাসনকে বাদ দিয়ে সরকারের মুখাপেক্ষী হন না কেবল, তদ্বিরেও সকল সীমা ছাড়িয়ে যান। অবশেষে আজ সকালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রীর অনুরোধে অনশনরত ছাত্ররা তাদের অনশন ভঙ্গ করে। এইজন্য আমি তাদেরকে অভিনন্দন জানাই এবং তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

রাশেদ খান মেনন। ফাইল ছবি

জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, “মৌসুমে মৌসুমে জঙ্গি তাণ্ডব, জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এতে প্রমাণ হয় যে, হেফাজত-জামাত-জঙ্গি এরা বদলায়নি। এরা বাংলাদেশের রেজিস্ট্রার্ড বেঈমান। পাকিস্তানপন্থার ধারক ও বাহক। এদের আত্মা পাকিস্তানি।

“এই সাম্প্রদায়িক চক্র বাংলাদেশের ধর্মরিপেক্ষতাকে হারাম বলে। আর ভারত, আমেরিকা, ইংল্যান্ডে গেলে তারা ধর্মনিরপেক্ষতাকে হালাল বলে। আরাম মনে করে। এই দ্বিমুখী চালবাজির রাজনীতি বন্ধ করা দরকার। এটা প্রমাণ হয় যে… জঙ্গিরা হচ্ছে মাঠের অ্যাক্টর। জামায়াত হচ্ছে ডিরেক্টর। বিএনপি হচ্ছে প্রডিউসার। সুতরাং এরা পাক রুহানি শক্তি দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত। জেনেটিকালি সম্পর্কযুক্ত। তিনপক্ষকেই দমন ও বিদায় জানানো উচিত।”

হেফাজতের তাণ্ডব, ধ্বংস ও এর ক্ষয়ক্ষতির ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশের পাশাপাশি দুর্গাপূজার সময় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়ার দাবি জানান ইনু। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও কমিশন গঠন জরুরি বলেও তিনি মত দেন।

১৯৭১ সালে গণহত্যার জন্য পাকিস্তদানের ক্ষমা চাওয়ার দাবি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জাসদ সভাপতি।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথ চলার জন্য স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে সংবিধান পর্যালোচনা করা দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সংবিধান পর্যালোচনা ও সংস্কার করা দরকার। সেজন্যই সংবিধান পর্যালোচনার জন্য সংসদের বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করছি।”

আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবণ্টন নিশ্চিতে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার এবং নদী কমিশনকে সক্রিয় করার আহ্বান আহ্বান জানান তিনি।  

ইনু বলেন, “সাম্প্রতিক ইউপি নির্বআচনে যে রক্তারক্তি-খুনোখুনি হয়েছে, তার দায় প্রশাসন এবং পুলিশ এড়াতে পারে না। তাদের এই দায় নেওয়া উচিত এবং সংশোধান হওয়া উচিত। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য ওঠানামা মূ্ল্যস্ফিতীর জন্য নয়, বাজার কারসাজির জন্য। এ ব্যাপারে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

“বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে জাতির পিতার ভাস্কর্য, ম্যুরাল ভাঙা হয়েছে। অনেকেই যারা মুজিব কোট পরে, তারা ভয়ে মুজিব মিনার বানানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এটা দুঃখনজক।”

দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলার কথা তুলে ধরে ইনু বলেন, “সেখানে দেখে মনে হয়েছে, ওইখানে সরকার নেই, আইন নেই। আওয়ামী লীগ নেই। প্রশাসন নেই। জাসদ নেই। ১৪ দল এমপি-মন্ত্রী নেই।

“উন্নয়ন হচ্ছে যেমন সত্যি, তেমন বাংলাদেশপন্থা ও পাকিস্তানপন্থার যুদ্ধ চলছে তাও সত্য।”