ইসি আইন নিয়ে বিএনপি বললো, ‘যে লাউ, সেই কদু’

নির্বাচন কমিশন নিয়োগে যে আইন হচ্ছে, তার ফলে ‘যে লাউ সেই কদু’ হবে বলে মনে করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2022, 09:47 AM
Updated : 18 Jan 2022, 10:39 AM

সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে এ কথা বলেন এ কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, “ইসি নিয়োগে মন্ত্রিসভায় যে আইনের খসড়া অনুমোদন হয়েছে, তাতে ‘পর্বতের মূষিক প্রসব’ বা একটি ‘পচা কদু’ হতে যাচ্ছে। ‘অনুগত ও অপদার্থ’ ইসি গঠনের চলমান প্রক্রিয়াকে দলীয় স্বার্থে আইনি রূপ দেওয়ার সরকারি অপপ্রয়াসের ফলাফল হবে ‘যেই লাউ, সেই কদু’। এবার সম্ভবত হতে যাচ্ছে একটি পচা কদু।”

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিলের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলা হবে এবং তা পাস করে তার অধীনেই আসবে নতুন ইসি।

আর সংসদে উঠলে আইনটি পাস হতে যে দেরি হবে না, সেই ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সংবিধানে বলা হয়েছে, আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন। কিন্তু সংবিধানের আলোকে ওই আইন গত ৫০ বছরেও হয়নি।

গেল এক দশকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে সর্বশেষ দুই নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এবারও সার্চ কমিটি করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেন।

প্রায় সব দলই সেখানে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দিয়েছে। কয়েকটি দল নতুন সার্চ কমিটির জন্য নাম প্রস্তাব করলেও কেউ কেউ বলেছে এ প্রক্রিয়ার ‘কোনও দরকার নেই’। তবে বিএনপি সংলাপে যায়নি।

মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদনের বিষয়টি নিয়ে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তাতে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এসে মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “এটা মূসিকের চেয়ে বেশি কিছু প্রসব করবে না। এতো দিন ধরে যেটা প্রশাসনিক কায়দায় হয়েছে, এখন সেটা আইনি কায়দায় হবে। আমরা ওইজন্য বলেছি যে, ‘যেই লাউ, সেই কদু’।

“পঁচা কদু এজন্য বলছি যে, খসড়া আইনে আরেক প্রস্তাব করা হয়েছে- সরকারি চাকরির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ছাড়া কেউ এর সদস্য হতে পারবেন না। অর্থাৎ সিভিল সোসাইটির কেউ অথবা কোনো শিক্ষাবিদ, কোনো আইনজ্ঞ তারা কেউ সদস্য হতে পারবেন না। দুনিয়ার কোথায় এরকম বিধি-নিষেধ আছে?”

বিএনপির এই নেতা বলেন, “এই যে সারা জীবন সরকার আদেশ মেনে চলার যাদের অভ্যাস, সেই সরকারি কর্মকর্তা বা যাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার তাদেরকেই দিয়ে শুধু নির্বাচন কমিশন হবে, এরকম একটা আইন করা- এটা তো সেই কদু ... আমরা সেজন্য বলেছি যে, সম্ভবত পচা কদু হতে যাচ্ছে।”

খসড়া আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিনা ভোটের অনির্বাচিত একটি অবৈধ সরকারের নিকট থেকে জনগণ এর চেয়ে বেশি কিছু প্রত্যাশা করে না। একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের নৈতিক যোগ্যতা ও সামর্থ্য আছে শুধু একটি নির্বাচিত সরকারের।”

‘শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়’

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা আবারও বলেন নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, “আমরা তো এই সরকারের এবং সরকারি প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করতে রাজি না। আমরা এটা বলে দিয়েছি যে, এই সরকার যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত না, তারা গণবিরোধী। তাদের সাজানো প্রশাসনের অধীনে নির্বাচনে যাব না। আর তাদের করা যে নির্বাচন কমিশন অযোগ্য, অপদার্থ হিসেবে সারা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত, তাদের অধীনে তো আমরা নেই।

“তারা (সরকার) যেটা করতে যাচ্ছে, এটা আলটিমেটলি একই জিনিস দাঁড়াবে। আইনে যেটা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে...। দেখেন আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে যে, সমস্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। কাজেই যে যেই আইন বলেন, আর যাই বলেন, ফাইনালি তার অ্যাপ্রুভাল ছাড়া কিছুই হবে না।

“আর উনি এই এত দিন ধরে যা করে আসছেন, তার বাইরে কিছু করবেন তা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নাই। ফলে এই সরকার, প্রশাসন, এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমাদের নির্বাচনে যাওয়ার কথা তো পরে.., জনগণ নির্বাচন করতে কিনা সেটা দেখা যাবে।”

‘রাষ্ট্রপতির সংলাপ অর্থহীন’

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপকে ‘অর্থহীন’ হিসেবে বর্ণনা করেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, “আমরা দেখলাম, সেটা হল- একদিক থেকে রাষ্ট্রপতিরও কোনো ক্ষমতা নাই, যারা গেছেন, তাদেরও কোনো ক্ষমতা নাই। এই সংলাপ অর্থহীন, এটা ইতিহাস প্রমাণ করে। এই সংলাপে কোনো কিছুই অর্জিত হয়নি। বরং ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।”

“রাষ্ট্রপতি সংলাপ আহবান করলেন, অনেকেই গেল, নানা প্রস্তাব করলেন তার কাছে। বিভিন্নভাবে প্রস্তাব। একজন এটাও বলেছেন যে, জিয়ার মুক্তির ব্যাপারেও বলেছেন। কিন্তু এর কোনো কিছু কি আমরা দেখলাম? আমরা কী জানি যে, রাষ্ট্রপতি কি প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব করেছেন, যে আপনি একটা আইন করেন। অর্থাৎ সংলাপের জায়গায় সংলাপ, সিদ্ধান্তের জায়গায় সিদ্ধান্ত। উনাকে (রাষ্ট্রপতি) সংলাপ করতে দিয়ে মন্ত্রিসভা আইন প্রনয়নের কাজ করেছে। কাজেই এই সংলাপ.. সেই কারণেই আমরা যাইনি। এটার কোনো অর্থ নেই।”

আরও খবর