নারায়ণগঞ্জ সিটি ভোট: সম্পদ কমেছে আইভীর, তৈমুরের কমেছে মামলা

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর বেতনের বাইরে আর কোনো ‘আয় নেই’; নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে তার সম্পদও কমেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2021, 07:42 AM
Updated : 28 Dec 2021, 08:24 AM

তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার এবার নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।গত তিন বছরে তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে আয়।  

আসছে ১৬ জানুয়ারির নির্বাচনে আইভী আর তৈমুরসহ মোট সাতজন

মেয়র পদে লড়ছেন। হলফনামায় প্রার্থীদের দেওয়া সম্পদের বিবরণী ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।  

এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলরের ২৭টি পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলরের ৯টি পদে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মতিয়ুর রহমান জানিয়েছেন।

প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে মঙ্গলবার। প্রতীক পেয়েই প্রচারে নামতে পারবেন প্রার্থীরা।

মেয়র প্রার্থী যারা

সেলিনা হায়াৎ আইভী, বাংলদেশ আওয়ামী লীগ

এ বি এম সিরাজুল মামুন, খেলাফত মজলিস

মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

মো. জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন

মো. রাশেদ ফেরদৌস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

 

তৈমুর আলম খন্দকার, স্বতন্ত্র

কামরুল ইসলাম, স্বতন্ত্র

সেলিনা হায়াৎ আইভী

টানা দুই মেয়াদে নারায়ণগঞ্জে মেয়রের দায়িত্ব পালন করা আসা ৫৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নামে কোনো মামলা নেই, স্থাবর সম্পদও নেই।

এবারের হলফনামা বলছে, নগদ অর্থ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও স্বর্ণালঙ্কার মিলিয়ে ২৫ লাখ টাকার বেশি অস্থাবর সম্পদ রয়েছে চিকিৎসা পেশা থেকে রাজনীতিতে আসা আইভীর।

২০১৬ সালের নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, নগদ, ব্যাংকে জমা, স্বর্ণালঙ্কার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাব ও পরিবারকে ঋণ দেওয়া বাবদ আইভীর ছিল ৪২ লাখ ২৪ হাজার ২৫০ টাকার অস্থাবর সম্পদ।

সে সময় যৌথ মালিকানার ১১২ শতাংশ অকৃষি জমির আট ভাগের একভাগের মালিক ছিলেন তিনি, এবারের হলফনামায় সেই জমির উল্লেখ নেই। 

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে পাওয়া বেতনের বাইরে কোনো আয় নেই আইভীর; জমি, বাড়ি বা কোনো স্থাবর সম্পদও নেই। 

এবার তিনি বেতন বাবদ বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

২০১১ সালে পৌর মেয়র থেকে সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। সে সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ১৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা ছিল ১০ লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ছিল ৩০ হাজার টাকার।

জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আইভী এমবিবিএস ও এমডি ডিগ্রিধারী। তার স্বামী কাজী আহসান হায়াত কম্পিউটার প্রোগ্রামার। দুই সন্তান রয়েছে তাদের।  

আইভীর বাবা আলী আহম্মদ চুনকা নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।

 

তৈমুর আলম খন্দকার

বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় জেলা বিএনপির আহবায়ক তৈমুর আলম খন্দকার এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

৭৪ বছর বয়সী এ আইনজীবীর বিরুদ্ধে বর্তমানে ১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি বিচারাধীন, ৩টি স্থগিত ও ২টি চার্জ শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

অতীতে ২০টি মামলার তথ্যও হলফনামায় উল্লেখ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী তৈমুর, অপরাধ বিজ্ঞানে যার একটি মাস্টার্স আছে।

হলফনামায় তিনি বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোনো মামলা নেই, অর্থাৎ রাষ্ট্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি।”

এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তৈমুর আলম খন্দকার। সে সময় তিনি সব মিলিয়ে ২৯টি মামলার বিবরণ দিয়েছিলেন।

এবারের হলফনামায় বাড়ি ভাড়া থেকে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ১৪১ টাকা, আমানতের সুদ হিসেবে ২৫০০ টাকা এবং আইন পেশা থেকে ২ লাখ ৫ হাজার টাকার আয় দেখিয়েছেন তৈমুর।

২০১৮ সালের হলফনামায় আয়ের ঘরে বাড়ি ভাড়া থেকে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ১৪০ টাকা, আমানত থেকে ২ হাজার ২৩ টাকা এবং আইন পেশা থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন তিনি।

এবার অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ৫ লাখ নগদ টাকা, স্ত্রীর নামে ২ লাখ টাকা, দুজনের নামে ১৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার থাকার তথ্য দিয়েছেন এই বিএনপি নেতা। 

আর স্থাবর সম্পদের তালিকায় রাজউকে ৫ কাঠার প্লট, ২৭৬ বর্গমিটার ফ্লোর স্পেসের নির্মাণাধীন একটি বাড়ি, স্ত্রীর নামে ৩১৪ বর্গমিটার ফ্লোর স্পেসের ফ্ল্যাট। যৌথ মালিকানায় ২৩০ শতাংশ কৃষি ও অকৃষি জমির কথা লিখেছেন তৈমুর।

২০১৮ সালের হলফনামায়  তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৫৫৫ টাকা; স্ত্রীর নামে ৭ লাখ টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৪৩ লাখ টাকা থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া স্ত্রীর নামে একটি মাইক্রোবাস, ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার থাকার কথা বলা হয়েছিল।

আর স্থাবর সম্পদের মধ্যে বিসিকে একটি প্লট, রাজউকে একটি প্লট, নারায়ণগঞ্জে ৬ তলা দালান, স্ত্রী ও যৌথ মালিকানার কৃষি জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট থাকার কথা বলা হয়েছিল সে সময়।

 

রাশেদ ফেরদৌস

নারায়াণগঞ্জের মেয়র পদের জন্য ৪৬ বছর বয়সী মো. রাশেদ ফেরদৌস লড়বেন কল্যাণ পার্টি থেকে।

হলফনামা বলছে, মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করা রাশেদের নামে কোনো মামলা নেই; পেশায় ব্যবসায়ী। এবি পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক তিনি।

>>আয়: ব্যবসা থেকে ২৩ হাজার ৮৮৬ টাকা, চাকরি থেকে ৮ লাখ ৬ হাজার ৭০০ টাকা। স্ত্রীর আয় ৩ লাখ টাকা।

>> অস্থাবর সম্পদ: নগদ টাকা ৫ লাখ ৮ হাজার ৩৭৩ টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৪২ হাজার ৯১৩ টাকা। স্ত্রীর নামে ৩ ভরি স্বর্ণ।

>> স্থাবর সম্পদ: কৃষি জমি ৬.১২ শতক, অকৃষি জমি ১.৩৩ শতক। ১১ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যাংকের কাছে ঋণ।

মাওলানা মো. মাসুম বিল্লাহ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ৩৯ বছর বয়সী মাওলানা মো. মাসুম বিল্লাহ দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমান) পাস। তার নামে মামলা নেই। পেশায় ব্যবসায়ী।

>> বার্ষিক আয়: ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

>> অস্থাবর সম্পদ: নগদ টাকা ১ হাজার ৪৭৬ হাজার টাকা। ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার; দেড় লাখ টাকার আসবাব।

এ বি এম সিরাজুল মামুন

খেলাফত মজলিশের এ বি এম সিরাজুল মামুন ইংরেজিতে এমএ। পেশার ঘরে লিখেছেন প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করার কথা। তার নামে চারটি মামলা রয়েছে।

>> বার্ষিক আয়: ভাড়া থেকে আয় ১ লাখ ২৫ হাজার ৭০০ টাকা, কোচিংয়ে শিক্ষকতা থেকে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩০০ টাকা।

>> অস্থাবর সম্পদ: নগদ ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ৯৮ হাজার ৫০০ টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং ৮০ হাজার ২০০ টাকার আসবাব।

>>স্থাবর সম্পদ: যৌথ মালিকানায় ৬.৪৫ শতাংশ জায়গায় বাড়ি।

মো. জসীম উদ্দিন

প্রকৌশলী জসীম উদ্দিন লড়ছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের হয়ে। তার নামে কোনো মামলা নেই।

>> বার্ষিক আয়: ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

>> অস্থাবর সম্পদ নেই।

>> স্থাবর সম্পদ: নির্মাণাধীন একটি বাড়ি এবং ৫.২৫ শতাংশ অকৃষি জমি।

আরও পড়ুন-