অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার শপথ আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রায়

বাঙালির মুক্তির বিজয় উদযাপনের শোভাযাত্রায় ঢাকার রাজপথের দীর্ঘ অংশ ছেয়ে যায় লাল সবুজ ও জাতীয় পতাকায়; যেখান থেকে সব অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার শপথ নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের চূড়ান্ত পতনের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2021, 12:20 PM
Updated : 18 Dec 2021, 02:29 PM

শনিবার বিকালে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে এ শোভাযাত্রা আয়োজন করে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ।

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরুর আগে ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের রাস্তায় খোলা ট্রাকের মঞ্চে দলটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতারা বক্তব্য রাখেন।

বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হয় শোভাযাত্রা। এর আগেই দুপুর ১টার দিকেই শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সড়ক ভরে যায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকে।

ঢাকা মহানগরীর ১৫টি নির্বাচনী এলাকা, ৪১টি থানা এবং শতাধিক ওয়ার্ড থেকে অসংখ্য মিছিল এসে একত্রিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে।

আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগের কর্মীরা লাল-সবুজ রংয়ের শাড়ি পরে মিছিলে অংশ নেন। আওয়ামী লীগের অনেক কর্মীদের পরনে ছিল জাতীয় পতাকা খচিত টি শার্ট, পাঞ্জাবি কিংবা ফতুয়া।

খোলা ট্রাকে মাইকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং মুক্তিযুদ্ধে উজ্জীবনী দেশাত্মবোধক সঙ্গীত বাজাতে দেখা গেছে। ঘোড়ার গাড়িও ছিল শোভাযাত্রায়।

শোভাযাত্রাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, এলিফ্যাট রোড ও মিরপুর রোড হয়ে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন প্রাঙ্গণে শেষ হয়।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু।

আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমু বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিল, তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতাকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল।

“কিন্তু বিভিন্ন পথ পরিক্রমার মধ্য দিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই স্বাধীনাতা উদযাপন করতে পারছি।“

অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার শপথ নিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতোই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে গিয়েছেন। ১৯ বার মৃত্যুপথ যাত্রী শেখ হাসিনা জীবিত আছেন বলেই বঙ্গবন্ধুর সেই অসমাপ্ত কাজ তিনি যেটা চেয়েছিলেন, বাঙালি জাতি পৃথিবীর বুকে একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে- সেটা সম্ভব হয়েছে।

“আজ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করেছে, একটি সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবে, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে।”

ষড়যন্ত্র থেমে নেই মন্তব্য করে আমু বলেন, সব অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকবিলা করাই হোক আজকের দিনে আমাদের শপথ।

সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাত্র কয়েক বছর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালে হত্যার মধ্য দিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। সব ষড়যন্ত্র, হত্যা-খুনের রাজনীতি অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজয় র‌্যালিতে জাতীয় পতাকা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিন্নভিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাব, এই হোক আজকের শপথ।”

সব অপশক্তিকে রুখে দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সমস্ত অপশক্তিকে, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীকে চূড়ান্তভাবে পতন করাই হোক আজকের দিনে আমাদের প্রত্যায়।”

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গি গোষ্ঠী, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তিকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না- এটাই হোক আজকের দিনে আমাদের প্রত্যয়, আমাদের শপথ।”

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, “সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে, সব সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ব।”

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও মির্জা আজম, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আতিক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।