যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অবশ্যম্ভাবী ছিল: ফখরুল

র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই বাহিনীর উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অবশ্যম্ভাবীই ছিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2021, 11:36 AM
Updated : 11 Dec 2021, 11:36 AM

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আসার পরদিন শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

ফখরুল বলেন, “আজকে যে খবরটা বেরিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেনজীর ও র‌্যাব প্রধানের ওপর। আমি এটা চমক মনে করি না, আমি এটাকে মনে করি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি।”

বিএনপির শাসনামলে র‌্যাব গঠনের পর থেকেই এই বাহিনীর ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ নিয়ে সমালোচনামুখর মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

আর গত এক যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দল দমনে রাষ্ট্রীয় এই বাহিনীকে ব্যবহার করে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের সাবেক প্রধান এবং বর্তমানে পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মূলত ২০১৮ সালে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হককে ‘হত্যার’ ঘটনায় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ফখরুল বলেন, “আমরা এতদিন ধরে বলছি যে, মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে। আমরা বলছি যে এই সরকার রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করছে, পুলিশকে ব্যবহার করছে প্রশাসনকে ব্যবহার করছে, করে মানুষকে হত্যা করছে নির্মমভাবে। এটা প্রমাণিত হয়েছে আজকে।

“গতকাল যে যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের যে সম্মেলন হয়েছে, সেই সম্মেলনে বাংলাদেশেকে ডাকা হয় নাই। এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকার বাংলাদেশকে আজকে লজ্জার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।”

“আমার প্রশ্ন, এখন আমরা দেখতে চাই, এই সরকার এই সমস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে তারা কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে? না কি তারা আগের মতো চলবে?” প্রশ্ন রাখেন বিএনপি মহাসচিব।

বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের সামনেও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের মতো পরিণতি রয়েছে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “আমরা একথা জানি, কারা লুট করে সমস্ত অর্থ পাচার করে দিচ্ছে দেশের বাইরে। কারা হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে বেগমপাড়ায় বাড়ি তৈরি করেছে, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে, এটা আমাদের দেশের সবাই জানে।

“পরিণতি এটাই দেখবেন, এই সম্পদও তারা ভোগ করতে পারছে না। আজকে বলা হয়েছে যে, এই সম্পদগুলো সব বাজেয়াপ্ত করা হবে।”

অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর দাবিতে ২০ দলীয় জোট শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ফখরুল।

খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ফখরুল বলেন, “আমি আশা করব, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হবে, ছোট-খাটো বিভেদ ভুলে গিয়ে। আজকে গোটা জাতি ডুবে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠে দাঁড়াতে হবে।

“আমাদেরকে সোচ্চার কণ্ঠে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে আর আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।”

এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার পরিচালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, এনডিপির আবু তাহের, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর ছেলে ওমর শরীফ মো. ইমরান বক্তব্য রাখেন।