শুল্ক ফাঁকি: দণ্ডিত এমপি হারুনকে আর জেলে যেতে হবে না

শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা গাড়ি বিক্রি করে শুল্ক ফাঁকির মামলায় বিচারিক আদালতের রায় সংশোধন করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের ১৬ মাসের কারাবাসের সময়কেই সাজা হিসেবে গণ্য করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2021, 09:30 AM
Updated : 9 Dec 2021, 09:30 AM

এর ফলে হারুনকে আর কারাগারে ফিরতে হচ্ছে না। তবে তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না, সেই প্রশ্নে দুই পক্ষের আইনজীবীরা দুই রকম মত দিয়েছেন।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত এ মামলায় হারুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। এছাড়া চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যবসায়ী এনায়েতুর রহমান বাপ্পীকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা; আর গাড়ি ব্যবসায়ী ইশতিয়াক সাদেককে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তিনজনই হাই কোর্টে আপিল করেছিলেন। তিনটি আপিলই খারিজ করে বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছে বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ। 

রায়ে বলা হয়, বিচারিক আদালতের সাজা সংশোধন করে তিনটি আপিলই খারিজ করা হল। বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা কমিয়ে আপিলকারীদের কারাবাসের মেয়াদ পর্যন্ত সাজা নির্ধারণ করা হল।

হাই কোর্টে সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের পক্ষে আপিল শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সৈয়দ মিজানুর রহমান।

এনায়েতুর রহমান বাপ্পীর পক্ষে আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী এবং ইশতিয়াক সাদাদের পক্ষে শাহরিয়া বাপ্পী শুনানি করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

রায়ের পর আইনজীবী মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ মামলায় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ প্রায় ১৬ মাস কারাভোগ করেছিলেন। কারাভেগের ওই সময়টা সাজা হিসেবে গণ্য করে আপিল খারিজ করে দিয়েছেন।

“হাই কোর্টের এ রায়ের ফলে তাকে আর সাজা ভোগ করতে হবে না। তার সংসদ সদস্য পদ নিয়েও কোনো সমস্যা হবে না, কারণ সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতে হলে ন্যূনতম দুই বছর সাজা হতে হবে। তিনি নির্বাচনও করতে পারবেন।”

এ মামলা থেকে খালাস চেয়ে হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে হারুন আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।

তবে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান মনে করেন, সাজা কমলেও সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হারুনুর রশিদ আর সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারবেন না।

“কারণ তিনি দণ্ডিত এবং এতে তার নৈতিক স্থলন প্রমাণিত।”

এ রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করবে কিনা জানতে চাইলে খুরশীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেন দুদক আপিল করবে? এ রায় তো দুদকের পক্ষেই গেছে।”

ইশতিয়াক সাদেকের আইনজীবী শাহরিয়া বাপ্পী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার মক্কেল ৮১ দিন সাজা খেটেছেন। ওই ৮১ দিনই তার সাজা। আর এনায়েতুর রহমান বাপ্পী সম্ভবত ৬ মাস কারাভোগ করেছেন।”

বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময় সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করে তা বিক্রির অভিযোগে হারুনসহ ওই তিনজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ এই মামলা করা হয় ঢাকার তেজগাঁও থানায়।

তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৮ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোনায়েম হোসেন।

সেই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আদালত ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট হারুনসহ তিন আসামির বিচার শুরু করে।

এক যুগ পর ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠান। কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। 

এছাড়া এনায়েতুর রহমান বাপ্পীকে দুই বছর কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং ইশতিয়াক সাদেককে তিন বছর কারাদণ্ড এবং ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করে আদালত। বাপ্পী ও সাদেককে ওই রায়ে পলাতক দেখানো হয়।

ওই রয়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৮ অক্টোবর হাই কোর্টে আপিল করেন হারুনুর রশীদ। সঙ্গে জামিন আবেদন করেন। সেদিন আদালত তাকে ছয় মাসের অন্তবর্তী জামিন দিয়ে তার আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে। দুই বছর তার তার নিষ্পত্তি করে রায় দিল আদালত।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি হারুন একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপির সংসদীয় দলের নেতৃত্বে আছেন।