পাশে রাঙ্গাঁকে রেখে জিএম কাদেরের প্রশ্ন সরকার-বাস মালিক ‘আঁতাত’ নিয়ে

দেশের বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ‘আঁতাত’ রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন করলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2021, 10:39 AM
Updated : 28 Nov 2021, 11:38 AM

রোববার সংসদ অধিবেশনে এই ব্ক্তব্যে এই প্রশ্ন তোলার সময় বিরোধীদলীয় উপনেতা কাদেরের পাশেই ছিলেন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ, যিনি সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি।

চলতি সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে কাদের যখন এই প্রশ্ন রাখছিলেন, তখন পাশের আসনে বসা রাঙ্গাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমরা গরিব, সবচেয়ে গরিব।”

ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ার পর পরিবহন মালিকদের দাবি মুখে বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায় সরকার। যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতাদের অভিযোগ, সরকার বাস মালিকদের কাছে নতি স্বীকার করেছে।

বাস ভাড়ার প্রসঙ্গ তুলে জি এম কাদের বলেন, “জ্বালানি তেলে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাসের মালিকরা বাসের ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করতেই পারেন। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু দেশব্যাপী মানুষ অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হল। তেলচালিত বাস বন্ধ হল। সেটা হতেই পারে, মানলাম। গ্যাসচালিত বাস বন্ধ হল কেন?”

“কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ বা সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সারা দেশময় পরিবহন বন্ধ হওয়া স্বাভাবিক নয়। আমাদের বিআরটিএ বলে একটা সংস্থা আছে। যাত্রীদের জিম্মি করে অঘোষিত ধর্মঘট ডেকে যারা দাবি আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।”

সে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার নজির না দেখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “পরিবহন সেক্টর আসলে কে নিয়ন্ত্রণ করছে? সরকার? সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে এখানে? না কি মালিক-শ্রমিক সমিতি করছে? সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি এই খাতের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করছে?”

বিরোধীদলীয় উপনেতা কাদের গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করেন। সরকারকে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার আহ্বান জানান তিনি।

জ্বালানি তেলের দম বৃদ্ধির সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে মূল্য বৃদ্ধি খুব কি বেশি প্রয়োজন ছিল? আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে কমানো হয় না। কিন্তু বাড়লে বাড়ানো হয়। করোনার সময় আমরা সেটা করিনি। তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমবে বলে অনেকে মনে করছে। এটি দেশের বাজারে পুনঃনির্ধারণ করা উচিত।”

তিনি বলেন, “দারিদ্র্যের হার বাড়ছে, বেকারত্বের হার বাড়ছে। খোলাবাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ চোখে পড়েনি। বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। বেকারত্ব বাড়ছে, দারিদ্র্য বাড়ছে, আয় কমছে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষ কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে।”

এমপিদের অবসর ভাতার দাবি

জি এম কাদের সংসদ সদস্যদের জন্য অবসরকালীন আর্থিক সুবিধার দাবিও জানান সংসদে।

তিনি বলেন, “আমাদের অনেক সংসদ  সদস্য আছে, ১৫-২০-২৫ বছর আছেন। তারা সৎভাবে কাজ করেন। প্রশাসনের বা অনেক জায়গায় অবসরের পর আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। অনেক দেশে এমপিদের অবসর সহায়তা দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা করার দাবি করছি। তাহলে যারা সৎ ভাবে কাজ করতে চান, তারা মানবেতর জীবনে পড়বে না।”

তিনি আরও বলেন, “ভিআইপি লাউঞ্জ অবসরের পর কর্মকর্তারাও ব্যবহার করেন। এমপিরা পারেন না। সচিবদের দেওয়া হচ্ছে। অন্যদের দেওয়া হচ্ছে। আর্মিদের দেওয়া হচ্ছে। এমপিরা পান না। স্থানীয় সরকারে যারা আছেন,তাদেরকেও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নথি চুরি হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে জি এম কাদের বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম নিয়ে অনেক দিন ধরে কথা বলছি। দুর্নীত দূর হয়েছে-এমন মনে হচ্ছে না।

“সম্প্রতি কোনাকাটা সংক্রান্ত ১৭টি নথি গায়েব হয়ে গেল। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেওয়া হলো, ফাইল ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। যেখানে দুর্নীতি হয় সেখানে ফাইল গায়েব করে দিলে আর সাজা হয় না। ফাইল গায়েবে বোঝা যাচ্ছে, দুর্নীতি হচ্ছে।”