মাঠে অনুশীলনে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের পতাকা ওড়ানোর নিয়ে সমালোচনার মধ্যে শনিবার সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে কথা বলেন বিএনপির এই নেতা।
হারুন বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টট হচ্ছে। পাকিস্তান ক্রিকেট টিম বাংলাদেশের সঙ্গে খেলছে। বাংলাদেশ যাই খেলুক না কেন। পাকিস্তানের সমর্থকেরা তাদের পতাকা উড়াচ্ছে। এটাকে কেন্দ্র করে একটা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে।
“মনে রাখতে হবে, তারা কিন্তু আমাদের দেশে মেহমান, অতিথি। আমাদের দেশের ক্রিকেট, আমাদের দেশের ফুটবল, আমাদের দেশের মেয়েরা সারা পৃথিবীতে খেলছে। সেখানে পতাকা উড়ে না বাংলাদেশের?”
হারুন বলেন, “সেদিন একজন সদস্য দেখলাম বিভিন্নভাবে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলেছেন।”
এসময় সরকারি দলের সদস্যরা হইচই করে হারুনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
পাকিস্তান ক্রিকেট দল মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে তাদের জাতীয় পতাকা সঙ্গে নিয়ে অনুশীলনে অংশ নেয়, যা নিয়ে চলছে সমালোচনা।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে বাংলাদেশে পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে আনার সমালোচনার বৃহস্পতিবার করেছিলেন আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন।
হারুন বলেন, “পাকিস্তানি টিমকে কেন খেলতে দিয়েছেন? খেলতে দিতেন না। দরকারই ছিল না। আপনি তো তাদের অনুমতি দিয়েছেন। তারা এখানে এসেছে। এটি ঠিক নয়। একটি দেশের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ ঠিক নয়। এটি আমাদের জন্য সম্মানের নয়, গৌরবের নয়।”
১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে হারুন বলেন, “বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ভারত-বার্মার মতো অতীত থেকে মুখ ফিরিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গেও নতুন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছি। অতীতের তিক্ততা দূর করতে কোনো প্রচেষ্টা থেকে নিবৃত্ত হইনি। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শন করে উপমহাদেশে শান্তি সহযোগিতার নতুন ইতিহাস রচনা করেছি। আমরা আমাদের আন্তরিকতায় প্রমাণ দিয়েছি।”
হারুন বলেন, “দেশে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরপরই ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়েছিলেন (বঙ্গবন্ধু), এটি তার ঐতিহাসিক দলিল।”
এসময় সরকারি দলের সদস্যরা হট্টগোল করলে হারুন স্পিকারের কাছে ‘প্রোটেকশন’ চেয়ে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে কথা বললাম, এখানেও যদি বাধা দেন তাহলে আর কী বলব মাননীয় স্পিকার। আমি এমন কিছু বলিনি, আমি উনার ভাষণ পড়ে শুনিয়েছি।”
এরপর হারুন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মোমিন তালুকদারের প্রসঙ্গ টানেন।
সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ (ফাইল ছবি)
এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “মাননীয় সদস্য আপনি এখানে বিচারের বিষয়ে কথা বলতে পারেন না। বিচার হয়েছে..আপনি বসুন।”
পরে তার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সরকারি দল ও শরিকদের অনেকেই হারুনের বক্তব্যের জবাব দিতে ফ্লোর চাইলে স্পিকার প্রথমে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমার রাঙ্গাঁকে ফ্লোর দেন। যদিও রাঙ্গাঁ সড়কের ইস্যু নিয়ে কথা বলেন।
পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে হারুনের বক্তব্যের জবাব দেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ যেভাবে পাকিস্তানের পক্ষে অবলম্বন করে সংসদে কথা বললেন, এতে তার প্রকৃত চরিত্র বেরিয়ে এসেছে। তারা যে রাজাকার, আলবদর, আল শামসের পক্ষে কথা বলছে ও রাজনীতি করছে। তারা যে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন না, সেটা প্রমাণিত হয়েছে।”
খালিদ মাহমুদ বলেন, “জাতির পিতাকে হত্যার পরে জিয়াউর রহমান হত্যাকারীদের শুধু লালন-পালনই করেনি. পাকিস্তানি ধারা বাংলাদেশে প্রবর্তন করার জন্য সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চরিত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। একই ধারাই তারা এখনও রাজনীতি করে যাচ্ছে। তার প্রমাণ আজকে হারুনুর রশিদ সংসদে উপস্থাপন করলেন।”
নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তান অপরাধ করেছে। বঙ্গবন্ধু যেহেতু শান্তিকামী মানুষের নেতা ছিলেন। তার সেই অহিংস ও শান্তিকে বিকৃত করে সংসদে উপস্থাপন করার চেষ্টা হচ্ছে। তারা মনে করেছিল যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে না। এই বিচার হওয়া তাদের সেই মনোকষ্ট ফুটে উঠছে। তার বক্তব্যে বেরিয়ে এসেছে।
“পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। তাদের সঙ্গে অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের সুরাহা হয়নি। তার মানে এই নয় যে, সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশ সরে গেছে।”