খালেদা জিয়াকে নিতে ৩টি দেশের সুপারিশ চিকিৎসকদের: ফখরুল

দেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও সঙ্কটাপন্ন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চিকিৎসকরা তিনটি দেশের যে কোনো একটিতে তাকে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2021, 05:34 PM
Updated : 23 Nov 2021, 06:35 PM

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশযাত্রায় সরকারের সায় এখনও না মেলার মধ্যে মঙ্গলবার রাতে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা জানান তিনি।

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া খালেদা জিয়া সরকারি আদেশে মুক্ত থাকার মধ্যে এখন অসুস্থ হয়ে ঢাকার বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালে রয়েছেন।

ফখরুল বলেন, “ম্যাডাম অত্যন্ত গুরুতরভাবে অসুস্থ। যে কথা আমি বলেছিলাম প্রথম দিনে, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এই কথাটাই এপ্রোপ্রিয়েট কথা। উনার অবস্থা এখনও ক্রিটিক্যাল। উনি বিপদের বাইরে বেরিয়ে এসেছেন, এটা বলার কোনো উপায় নেই।”

তিনি বলেন, “এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রতিদিন বোর্ড মিটিং করেন। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। আজকের বিকালের খবরটা আমি জানি না। আপনাদের এই অনুষ্ঠান শেষ করে আমি যাব।

“তবে আমি যতদূর জেনেছি যে কোনো ফার্দার ইম্প্রুভমেন্ট হয়নি। গতকাল যা ছিল, তার চেয়ে ভালো কিছু, সেটা না।”

“আমার সঙ্গে তার দুই একবার দেখা হয়েছে। তার মনোবল যথেষ্ট শক্ত আছে এবং তিনি সাহস করেন যে.. রোগীর মনোবলটা কিন্তু বড় জিনিস যে কোনো অসুখ থেকে রোগী সুস্থ হওয়ার জন্য। সেই মনোবলটা তার আছে,” বলেন তিনি।

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নেওয়া ‘জরুরি হয়ে পড়েছে’ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “চিকিৎসকরা জোর দিয়ে বলছেন যে, এখানে কিন্তু তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। এখন যে জটিল অবস্থা আছে, তার চিকিৎসা করতে হলে তাকে অবশ্যই একটা এডভান্সড সেন্টারে পাঠাতে হবে।

“সুনির্দিষ্টভাবে তারা দেশের নামও বলেছেন। আইদার ইউএসএ, ইউকে অথবা জার্মানি। এই তিনটা দেশের কথা বলেছেন তারা। এই তিনটা দেশের যে কোনো জায়গা হতে হবে।”

খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। বিএনপির আইনজীবীরা, ২০ দলীয় জোটের নেতারা মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ জানিয়ে এসেছেন।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, বর্তমান অবস্থায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আইনগত কোনো সুযোগ নেই। বিদেশ যেতে হলে তাকে কারাগারে ফিরে নতুন করে আবেদন করতে হবে।

এবিষয়ে রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো ভাবনা বিএনপির আছে কি না- প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, “যখন আমাদের নেত্রী কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন, তখন পরপর দুইবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে চিঠি দিয়েছিলাম এবং তাকে হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলেছিলাম।

“আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যেকটা প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমাদের কথাগুলো বলছি। এখন সরকারের বিভিন্ন প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই মুহূর্তে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের।”

“মোদ্দা কথা হচ্ছে, তাকে অতি দ্রুত, সময় নষ্ট না করে বিদেশে পাঠানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের কাছে আমি আবেদন জানিয়েছিলাম যে, রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাকে প্রাধান্য না দিয়ে জীবনকে বিশেষ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবনকে (প্রাধান্য দিয়ে), একটা স্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করবার জন্য উনাকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করে সুস্থ করে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি,” বলেন তিনি।

কুমিল্লার ঘটনা ‘অশনি সঙ্কেত’

কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “কমিশনারকে তার কার্যালয়ে ঢুকে মুখোশ পরে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করেছে। এগুলো আমাদের কাছে খুব অশনি সঙ্কেত মনে হয়।

“আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে যেটা মনে হয়, মানুষের সুস্থ রাস্তাগুলো যদি না থাকে, কোথাও রিলিফ না পায়, প্রতিকার না পায়, আস্থাগুলো চলে যায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে। তখনই কিন্তু এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে।”

ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা নির্বাচন বলা যাবে না। এই নির্বাচনে কোনো বিরোধী দল নেই।”

স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে না পরার পক্ষে মত দেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা দলীয়ভাবে অংশ নেব না। এবার এটা প্রমাণিত হয়েছে, এই নির্বাচন কোনো নির্বাচনই হচ্ছে না।

“আমাদের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকু সাহেব (শামসুল হক টুকু) তিনি একটা দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে যে কথাগুলো বলেছেন ‘পিষে দেব’, এটা কোনো রাজনীতিকের ভাষা হতে পারে না।”

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত ৬৬৯টি নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায ৬ হাজার ৪৮ জন আহত এবং ৯২ জন নিহত হওয়ার তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “সরকার গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে।”

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপির কোনো ‘চিন্তাই নেই’ বলে জানান তিনি।

হাফ ভাড়ার দাবিকে সমর্থন

গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’ দাবিকে যৌক্তিক উল্লেখ করে তাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের হাফ ভাড়ার দাবি এটা যুক্তিসঙ্গত। আমরা অবশ্যই এই হাফ ভাড়ার দাবিতে সমর্থন করি।”

ফখরুল বলেন, “মূল কথা হচ্ছে, সরকারের ক্যারেকেটারটি কী? আপনারা লক্ষ্য করে দেখুন, যখন ডিজেলের দাম বাড়ল, সাথে সাথে ওয়াইল্ড ক্যাটের মতো স্টাইকে চলে গেল বাস মালিকরা। তারপরে বাস মালিকদের সাথে সরকার বসল, দফা-রফা করে বাসভাড়া বাড়ান হলো। জনগণের কোনো উপকারে আসলো না।”