খালেদাকে বিদেশ পাঠাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুয়ারে জোট শরিকরা

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারপ্রধানের কাছে আবেদন করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পাঁচ শরিক দল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2021, 09:20 AM
Updated : 21 Nov 2021, 10:26 AM

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমের (বীর প্রতীক) নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই প্রতিনিধি দল রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে যান।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপির) চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম ছিলেন এই প্রতিনিধি দলে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, “আমাদের আসার উদ্দেশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের নিকট আবেদন করা। সেটি হল বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা, তাকে বিদেশে পাঠানো।

“লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি, মুখেও ব্যাখ্যা করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তরিকতার সাথে কথাগুলো শুনেছেন। তিনি তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।”

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের আবেদন আমি যথাযথভাবে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে… মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব।“

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ইবরাহিম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জোটের পক্ষ থেকে নয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজস্ব চিন্তা থেকে তারা খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন নিয়ে সরকারের দ্বারস্ত হয়েছেন। বিএনপির ঊর্ধ্বতন মহলও বিষয়টি জানে।

“বেগম খালেদা জিয়া এত বেশি গুরুতরভাবে অসুস্থ যে দেশে চিকিৎসার মাধ্যমে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সব প্রকার রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে, রাজনীতির অতীতের ভুল-ভ্রান্তিকে ভুলে গিয়ে একান্তভাবে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্বরূপ, একান্তভাবে সহমর্মিতা প্রদর্শন করে সরকার যেন বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট ব্যক্তিগতভাবে আবেদন, তিনি অনুমতি দিলে হয় সরকার বন্দোবস্ত করে পাঠাবে, বা দল বন্দোবস্ত করে পাঠাবে।

“এই কাজটি যদি করা হয়, আমরা মনে করি, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিকতার, উদারতার ও সৌজন্যবোধের দৃষ্টান্ত হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে।”

২০ দলের এই শরিক নেতা বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এটাও বলেছি, ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অন্তত আমি ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষী, বঙ্গবন্ধু কত উদার ও মহৎ ছিলেন। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের ভুলভ্রান্তি তিনি কীরূপভাবে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। তাই আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা- আপনি বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে মহানুভবতা প্রদর্শন করুন।”

৭৬ বছর বয়েসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি।

তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, যেহেতু দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু তাকে এখন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে তিনি যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে আবেদন করেন, সরকার তখন তা বিবেচনা করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন, সরকারপ্রধান হিসেবে নির্বাহী ক্ষামতায় তার যা করার ছিল, তিনি তা করেছেন। এখন বাকিটা ‘আইনের বিষয়’।

আইনের বাইরে গিয়ে মানবিক বিবেচনায় দণ্ডিত কাউকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া সম্ভব কি না- সেই প্রশ্নে ইবরাহিম বলেন, “আমরা বলেছি কোন রেফারেন্স, কোন আইন, কোন দৃষ্টান্তের প্রয়োজন নেই। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) এককভাবে সিদ্ধান্ত নিন। কারণ আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতোমধ্যে শুভেচ্ছা প্রদর্শন করেছেন। তিনি জেলখানার বাইরে নিজের গৃহে আছেন। আপনার শুভেচ্ছা আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিলে তিনি বিদেশে যেতে পারবে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের আবেদনটি ছিল যে, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন, তিনি একদম জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছেন। কাজেই তাকে আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া যায় কিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের একটি আবেদন এখানে নিয়ে এসেছেন।

“আমি তাদেরকে যথার্থই বলেছি যে, এর আগেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেগম খালেদা জিয়ার ছোটভাই একটা আবেদন করেছিলেন। সেটাও আমি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠিয়েছিলাম। মাননীয় আইনমন্ত্রী যথাযথভাবে পার্লামেন্টের প্রশ্নোত্তরের সময় বিস্তারিত বলেছেন।

“আমি এটা বলার পর তারা বলেছেন, এটা মানবিক কারণে দেওয়া যায় কিনা সেই একটা বিবেচনা করার জন্য পত্র আমার কাছে দিয়েছেন। এটা আমি যথাযথভাবে যেখানে প্রয়োজন সেখানে পাঠিয়ে।”

বিএনপি চাইলে বিদেশ থেকে ডাক্তার বা কনসাল্টেন্ট আনতে পারে বলে আইনমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন। একই কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেন।

“আমাদের হাসপাতালগুলো ওয়েল ইকুইপড। বিদেশ থেকে যে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এখানে আসতে পারে। বিদেশি ডাক্তার এলে যে চিকিৎসা ওখানে করা যায়, সেই চিকিৎসা এখানেও করতে পারেন। কিছুক্ষণ আগে ইউনাইটেড হাসপাতালের একজন ডাক্তার আমার এখানে এসেছিলেন- তিনিও আমাকে একই কথা বলেছেন।”

আবেদনকারীরা আইনের বাইরে গিয়ে কেবল মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়েই খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন নিয়ে এসেছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

“উনি (ইবরাহিম) বলেছেন, এটা উদাহরণ কিংবা আইন কোনো কিছুই নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন করে ছুটে গিয়েছিলেন কোকোর ইন্তেকালের পর…। আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু অনেকগুলো উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।

“কোকো যখন ইন্তেকাল করলেন, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দৌড়ে ছুটে গিয়েছিলেন তাকে সমবেদনা জানাতে। সেইদিন কিন্তু খালেদা জিয়ার বাসভবনের গেইটটিও খোলা হয়নি। এইগুলো সবগুলোই উনারা জানেন। তারপরেও তারা বলেছেন যে, একটা উদাহরণ সৃষ্টি করার জন্য, যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাই। অতীতে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলো ভুলে গিয়ে যেন কাজটা করা হয়।

“কোকো, একুশে অগাস্ট- সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে আরেকটা মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপনের কথা উনারা বলেছেন। আইন অনুযায়ী কোনো স্কোপ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে ইয়ে করতে পারেন। এটা উনারা বলে গিয়েছেন।”