খালেদাকে বিদেশ পাঠাতে গণঅনশনে বিএনপি

অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে গণঅনশনে বসেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2021, 04:22 AM
Updated : 20 Nov 2021, 04:32 AM

ঢাকার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় শনিবার সকাল ৯টায় এই কর্মসূচি শুরু হয়, তা চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরেও সাত ঘণ্টার এই গণঅনশন কর্মসূচি চলছে।

নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে মাদুর বিছিয়ে নেতা-কর্মীরা বসেছেন। কোরআন তিলওয়াতের পর খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়।

৭৬ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপারসন বর্তমানে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হলে সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগারের বাইরে রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে, তার দলও দাবি তুলেছে। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, বর্তমান অবস্থায় সেই অনুমতি দেওয়ার আইনি সুযোগ নেই।

গণঅনশন কর্মসূচির প্রারম্ভিক বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের প্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে গুরুতর অসুস্থ। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে লড়াই করছেন। আজকে এই গণঅনশন কর্মসূচি হচ্ছে আমাদের নেত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নের দাবিতে।

“কিন্তু এই সরকার এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা করছে না। আমরা বারবার অনুরোধ করছি, দেশের মানুষ অনুরোধ করছে, রাজনৈতিক দলগুলো অনুরোধ করছে, তারপরও সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”

কর্মসূচিতে মহাসচিব ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম, আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শাহজাদা মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জহিরউদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম আলিম, শামীমুর রহমান শামীম, বেলাল আহমেদ, আবদুস সালাম আজাদ, আমিরুজ্জামান শিমুল, আফরোজা আব্বাস, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, সাদেক আহমেদ খান, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, হেলাল খান, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল।

২০ দলীয় জোটের মোস্তফা জামাল হায়দার, খন্দকার লুতফুর রহমান, সৈয়দ এহসানুল হুদাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও এই কর্মসূচিতে রয়েছেন।

নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত সড়কের একপাশের ফুটপাত ও সড়কের একাংশে নেতা-কর্মীরা বসে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। সড়কের এক লেইনে যানবাহন চলাচল করছে এখন।

বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশসহ সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন।

খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। দেশে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর খালেদার পরিবারের আবেদনে তাকে গত বছরের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তবে তাতে শর্ত ছিল, তাকে দেশেই থাকতে হবে।

কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া ওঠেন গুলশানের বাসা ফিরোজায়। এরপর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এ বছরের মাঝামাঝিতে তিনি প্রায় দুই মাস হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

এর চার মাসের মাথায় আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। ২৬ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে বাসায় ফেরার পাঁচ দিন পর গত ১৩ নভেম্বর তাকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে কয়েকবার প্রত্যাখ্যান হওয়ার পর তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে গত ১১ নভেম্বর ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।

তার পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যেহেতু দণ্ড স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু তাকে এখন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার ‍সুযোগ আইনে নেই। তিনি যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে নতুন করে আবেদন করেন, সরকার তখন তা বিবেচনা করতে পারে।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার চাইলেই সেই অনুমতি দিতে পারে, কিন্তু দিতে চাইছে না।