খুনিদের মদদেই প্রমাণ, ‘তারা’ বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের পুরষ্কৃত করে জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ এবং খালেদা জিয়া ১৫ অগাস্টের সঙ্গে জড়িত থাকার ‘প্রমাণ দিয়েছেন’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2021, 05:30 PM
Updated : 19 Nov 2021, 05:30 PM

শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ কথা বলেন দলটির সভাপতি।

তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া, এরশাদ এবং জিয়াউর রহমান কীভাবে এই খুনিদের (বঙ্গবন্ধুর খুনিদের) মদদ দিয়েছে, আমার মনে হয় এই কথাটা জাতির জানা উচিত। কারণ যেই খুনিরা আমার ১০ বছরের ছোট রাসেল, তাকেও ছাড়েনি, বা চার বছরের শিশু সুকান্তকেও ছাড়েনি।

“যারা পরিকল্পিতভাবে এই হত‌্যাকাণ্ড করেছিল তাদেরকেই তারা পুরষ্কৃত করেছিল। আর পুরষ্কৃত করে তারা এটাই প্রমাণ করেছিল যে ১৫ অগাস্টের হত‌্যার সঙ্গে তারা জড়িত।”

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত‌্যার পর খুনিদের রক্ষায় তৎকালীন সরকার ইনডেমনিটি অধ‌্যাদেশ জারি করেছিল এবং খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরষ্কৃত করেছিল।

“আমরা দেখেছি জিয়ার আমলে তাদেরকে যেমন পুরষ্কৃত করা হয়, এরশাদের আমলে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়, এমনকি রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হবারও সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল কর্নেল ফারুককে।

“খালেদা জিয়া এসে তার থেকে আরও এক ধাপ উপরে উঠে খুনি রশীদকে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, যে নির্বাচন ভোটারবিহীন নির্বাচন, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ‌্য ছিল না সেই ‌নির্বাচনে ভোট চুরি করে কর্নেল রশীদকে এবং মেজর হুদাকে পার্লামেন্টে সদস‌্য করে এনে বসায় এবং কর্নেল রশীদকে বিরোধীদলের চেয়ারে বসায়।

১৫ অগাস্টের পর যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যাওয়া খুনি ফারুক-রশীদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে ১৯৭৬ সালে টেলিভিশন সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রায়ে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) ফারুক রহমান, কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতার আরেক খুনি ‌মেজর পাশা বিদেশে জিয়াউর রহমানের দেওয়া একটা কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে ইনডেমনিটি অধ‌্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতার হত‌্যার ‌বিচার শুরু করলে পাশাকে চাকুরিচ‌্যুত করা হয়। পরে সে বিদেশেই থেকে যায় এবং সেখানে মারা যায়।”

২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকারে এসে পাশার চাকুরিচ‌্যুতির আদেশ বদলে তাকে অবসর দেয় এবং তার বেতনভাতা সব ফিরিয়ে দেয়। এমনকি মৃত পাশাকে পদোন্নতিও দেওয় বলেও সভায় জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আরেক আসামি খায়রুজ্জামানের বিচার চলছিল এবং বিচারের রায় ঘোষণার তারিখ হয়েছিল, সেই সময় খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেয়। এমনকি একটা দেশে তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবেও পদোন্নতি দিয়ে পাঠায়।”

স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের সদস‌্যদের সঙ্গে  নির্মমভাবে হত‌্যা করা হয়। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

ছবি: পিএমও

শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতাকে হত‌্যার পর যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে সরকারে এসেছিল, তারা দেশে ফেরার পথে বাধা তৈরি করেছিল। পরে ১৯৮১ সালে দলের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফিরি।”

পরেও তারা বারবার আঘাত হেনেছে মন্তব‌্য করে তিনি বলেন, “এমনকি ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা, আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী শাহাদত বরণ করে, আর এখানেই থামেনি, আমাদের বহু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ অনেকেই সেই সময় তাদের হাতে নিহত হয়।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দেশে ‘অরাজকতার’ চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশে ১৯টা সামরিক ক‌্যু হয়। সামরিক বাহিনীর অনেক সদস‌্য, অফিসার, সৈনিক তাদেরকেও নির্মমভাবে হত‌্যা করা হয়।

“একেকটা ক‌্যু হয়েছে এবং সেই ক‌্যুর অপরাধ ধরে নিয়ে কোর্ট মার্শাল করা হয়েছে, ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়া হয়েছে এবং ফাঁসি দিয়ে হত‌্যা করা হয়েছে।”

সে সময়ে যাদের ‘নির্বিচারে’ নির্মমভাবে হত‌্যা করা হয়েছিল তাদের স্বজনরা এখন সেইসব হত‌্যাকাণ্ডেরর বিচার দাবি করছেন বলেও সভায় জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “এটা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই এই ঘটনাগুলো ঘটায়। কাজেই তাদের দাবি যে এরও একটা তদন্ত হোক এবং সেই লাশগুলো তারা কেন পেল না। এটা বাংলাদেশের জন‌্য একটা দুর্ভাগ‌্যজনক বিষয়।”

আরও পড়ুন