বিএনপি ‘যত খুশি গালি দিক’, কিছু করার নেই: আইনমন্ত্রী

দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি নিয়ে আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেছেন, তিনি ‘আইন অনুযায়ীই’ চলবেন।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2021, 10:08 AM
Updated : 18 Nov 2021, 11:10 AM

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি বলেন, “বিএনপি যে দাবি করছে, তা আইনের বইয়ে নেই। উনারা (বিএপি) আমাকে যত খুশি গালি দিতে পারেন। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি আইন মোতাবেক চলব।”

বৃহস্পতিবার সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সাংসদ জিএম সিরাজের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।

জিএম সিরাজ তার দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘মানবিক দিক বিবেচনায়’ দুয়েক দিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান। তা না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করারও হুমকি দেন।

বিএনপির এই সাংসদ বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো না হলে দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির পক্ষে এই সংসদে থাকা ‘হয়ত সম্ভব হবে না’।

“আমরা ছয়জন এই সংসদে আছি। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বলেন, এটা এই পার্লামেন্টের জন্য অলঙ্কার। আজকে তাই বলতে চাই, আমাদের সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যদি আমরা সত্যি সত্যি অলঙ্কারই হয়ে থাকি, তাহলে পার্লামেন্ট অলঙ্কারবিহীন করবেন না। এই কারণে, আমাদের দলীয় সিদ্ধান্তে এমনও হতে পারে, ম্যাডামের যদি চরম অবস্থা চলে যায়, তাহলে হয়ত এই পার্লামেন্টে  আমাদের থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। আমি এটাকে শর্ত দিচ্ছি না।”

জিএম সিরাজ বলেন, গত এপ্রিলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘চরম অবনতির দিকে’ যাচ্ছে।

“যা তাকে দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরিবার থেকে পাঁচবার আবেদন করা হয়েছে। দল থেকে বারবার আবেদন করা হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত জামিন দিয়ে দুয়েক দিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হোক।”

এ বিষয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে সিরাজ বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন রাগ বিরাগের বশবর্তী হবেন না। উনার গতকালের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিনয়ের সাথে বলছি, উনার বক্তব্যের সাথে শপথের ভাষা সাংঘর্ষিক। তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না, এটা কি সঠিক?”

৭৬ বছর বয়েসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি।

তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, যেহেতু দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু তাকে এখন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে আবেদন করেন, সরকার তখন তা বিবেচনা করতে পারে।

এ নিয়ে এক সাংবাদিক বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করলে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় যা করার ছিল, তা তিনি করেছেন, এখন বাকিটা ‘আইনের ব্যাপার’।

তিনি বলেন, “এতবড় অমানবিক যে, তাকে আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু আমি দেখিয়েছি। আর কত চান?”

সংসদে জিএম সিরাজ বলেন, “দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জামিন নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার নজির দেশে আছে। ১৯৭৯ সালে আসম আব্দুর রব সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও চিকিৎসার জন্য জার্মানি গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ নাসিম দুদকের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য সুযোগ পান।”

খালেদা জিয়া কেন সেই সুযোগ পাবেন না- সেই প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই সাংসদ বলেন, “এটা তার মৌলিক অধিকার। দেশের মানুষ মনে করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই করতে পারবেন, করেন। সর্বময় ক্ষমতার মালিক তিনি। এটা পাবলিক পারসেপশন।”

প্রধানমন্ত্রীকে সিরাজ অনুরোধ করেন: “মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে দুয়েক দিনের মধ্যে জামিন দিয়ে বিদেশ পাঠানো হোক। না হলে কিছু একটা হয়ে গেলে এর দায়ভার সারাজীবন আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে।”

জিএম সিরাজের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাংসদরা হইচই শুরু করেন। স্পিকার তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আইনের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। মানবিক কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে সাজা স্থগিত রেখে ছয় মাস পরে বাড়ানো হয়েছে।”

কিন্তু চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে অনুমতি দেওয়ার বিধান ‘আইনে নেই’, মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “আমিতো দেখিয়েছি যে বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই। উনারা যদি এটা দেখাতে পারেন, তাহলেতো আমরা এটা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এটা আইনের বইয়ে নাই। উনারও দেখাতে পারবেন না, বিবেচনার প্রশ্ন আসে না।”

সরকারি দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তার এই বক্তব্যে সমর্থন দেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, “২০০৭-০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদেশ যেতে দেওয়া হয়েছে, এটা অসত্য। প্রধানমন্ত্রী কখনো সাজাপ্রাপ্ত হননি। আ স ম আবদুর রবকে যখন পাঠানো হয়েছিল তখন দেশে ছিল মার্শাল ল। মাশাল লর ধারা ফৌজদারি কার্যবিধির ধারার সঙ্গে চলে না। উনারা যথেচ্ছা করেছেন। আজকে আইনের শাসন যেখানে আছে, সেখানে আমি যথেচ্ছা করতে পারি না। এটা হচ্ছে প্রকৃত ঘটনা।”

খালেদা জিয়াকে ‘সঠিকভাবে’ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “একজন সাজাপ্রাপ্ত… ৪০১ ধারায় কোনো সুযোগ নেই নিষ্পত্তিকৃত আবেদন আবার বিবেচনা করার।”