রাজনীতির ‘বাইরে গিয়ে’ খালেদা জিয়াকে বাঁচান: ফখরুল

রাজনীতির ‘বাইরে গিয়ে’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘বাঁচাতে’ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2021, 09:43 AM
Updated : 18 Nov 2021, 11:12 AM

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় হাসপতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি এই আহ্বান জানান।

বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। গত ১৩ নভেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম করছেন। তার চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।

“তিনি আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন রকম অসুখে। এই অসুখ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাকে বাইরে চিকিৎসা করাটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়, ডাক্তাররাই বলছেন, তাকে বিদেশে পাঠালে তিনি সুস্থ হবেন।”

৭৬ বছর বয়েসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এভারকেয়ার সবচেয়ে ভালো হাসপাতাল। এখানে যে ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে, তারাও বলছেন যে, ‘আমরা পুরোপুরি ইকুইপ্ড নই তার এই অসুখগুলো সারিয়ে তুলতে।

“এখন দেশনেত্রীর বিদেশে চিকিৎসাটা সবচেয়ে জরুরি। এ কথা বার বার বলা হচ্ছে। আজকে অন্য দলগুলো বলছে, সবাই বলছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নেত্রী- তিনি সম্পূর্ণভাবে সেটাকে গ্রহণ করছেন না।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় যা করার ছিল, তা তিনি করেছেন, এখন বাকিটা ‘আইনের ব্যাপার’।

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে সাময়িকভাবে মুক্তি দিয়েছে সরকার। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তাকে ঢাকায় তার বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। 

এর আগেও কয়েকবার তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার, তবে ওই শর্তের যুক্তি দেখিয়ে সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।  

বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সর্বশেষ আবেদনটি জমা দেন গত ১১ নভেম্বর।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপরাসন আবার জেলে গিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হবে।

এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবারের আলোচনাসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আবারও বলছি, আবারও আহ্বান জানাতে চাই, অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন, তার জীবন রক্ষার্থে। এর সঙ্গে রাজনীতিকে নিয়ে আসবেন না।”

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা হলে কারাজীবন শুরু হয় খালেদা জিয়ার। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়।

দেশে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনে তাকে গত বছরের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার।

আলোচনাসভায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই নেত্রীকে বাঁচানোর জন্য সর্বাত্মক যে প্রচেষ্টা, সেই প্রচেষ্টা গ্রহণ করবার জন্য প্রয়োজনে আমাদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করব। আসুন সেইভাবে আমরা প্রস্তুতি নিই, সেইভাবে আমরা কাজ করি।”

মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।

ফখরুল বলেন, “আসুন, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে যখন আমরা স্মরণ করব, তার আর্দশকে যখন আমরা স্মরণ করব, সেইসঙ্গে আমরা সবাই আজকে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমি ব্যক্তিগতভাবে শুধু নই, যারা আমরা রাজনীতি করি, আমরা স্বীকার করি, এই নেত্রীর যে অবদান, সেই অবদান বর্তমানে জীবিত কোনো রাজনৈতিক নেতার নেই।”

মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন ‘জাতীয় কমিটির’ আহ্বায়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও কমিটির সদস্য এসকে সাদীর সঞ্চালনায় এ আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ইশরাক হোসেন বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুন