জিয়ার পথেই ছিলেন খালেদা: শেখ হাসিনা

অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান যা করেছিলেন, তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও পরে ‘একই পথে’ হেঁটেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2021, 05:38 AM
Updated : 8 Nov 2021, 05:38 AM

রোববার যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “ওদের মধ্যে দেশপ্রেম নাই। জাতির জন্য কোনো কল্যাণ চিন্তা নাই। ক্ষমতাটাকে ভোগের বস্তু মনে করে, লুটপাটের বস্তুই মনে করে।”

জিয়ার উত্থানপর্বের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে ৭ নভেম্বর। ৭৫ সালে এই ৭ নভেম্বর বাংলাদেশে ক্যু হয়েছে। ৭৫ সালের পর বাংলাদেশে ১৯ বার ক্যু হয়েছে। একেকটা ক্যু যখন হয়েছে, সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সৈনিক, অফিসারদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।

“এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল ৭৫ এ যখন মোশতাক ক্ষমতা দখল করেছিল জিয়াউর রহমানের সহযোগিতায়, তিন মাসও যেতে পারে নাই, মোশতাককে বের করে দিয়ে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। আর সেই ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দেশে ১৮ বার ক্যু হয়।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেনা প্রধানের দায়িত্ব আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনা বাহিনীতে একটি অভ্যুত্থানে গৃহবন্দি হন জিয়া।

৭ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন, পরে দেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরের বছর তিনি রাষ্ট্রপতির পদও নেন।

জিয়া ক্ষমতা দখলের পর সামরিক বাহিনীতে অনেকগুলো বিদ্রোহ-অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়, যাতে জড়িতদের সামরিক আদালতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ডসহ নানা সাজা দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে এই রকম এক বিচারের পর কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই বিচারকে ‘অবৈধ’ বলে পরে রায় দেয় উচ্চ আদালত।

শেখ হাসিনা বলেন, “প্রত্যেকবার ক্যুর সময় জিয়াউর রহমানের হাতে হাজার হাজার সামরিক বাহিনীর সৈনিক, অফিসার, বিমান বাহিনীর অফিসার এবং অনেক মানুষ মারা যায়, তাদেরকে হত্যা করা হয়।

“কোর্ট মার্শাল দেওয়া হয়, সামারি ট্রায়াল দেওয়া হয়। এইভাবে মানুষকে হত্যা করে। আজকে ৭ নভেম্বর প্রকৃতপক্ষে এটা সৈনিক হত্যা দিবস। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হত্যা দিবস।”  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময়ে যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের পরিবারের অনেকে এখনো তাদের আপনজনকে খুঁজে পায়নি। লাশ না পাওয়ায় কাফন-দাফনও হয়নি। অনেকেই জানেন না, কীভাবে তাদের প্রিয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

জাতির পিতাকে হত্যার পর তার খুনিদের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। পরে জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে দেশের পরিস্থিতি কেমন ছিল সে কথাও বলেন। 

“বিদ্যুত দাবি করায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে ১৯জন মানুষকে হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া। সারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল বলে ১৮ জন কৃষককে হত্যা করেছিল।

“হত্যা করাটাই তাদের কাজ। জিয়াউর রহমান যেমন শত শত মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক অফিসারকে হত্যা করেছে, জওয়ানদের হত্যা করেছে, সৈনিকদের হত্যা করেছে, তার স্ত্রীও একই পথ অবলম্বন করেছে।”

দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার এবং গ্রেনেড মামলায় তার ছেলে তারেক রহমানের দাণ্ডিত হওয়ার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়ার ছেলেদের দুর্নীতি আমেরিকার এফবিআই খুঁজে বের করেছে এবং সিঙ্গাপুরে ধরা পড়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া কিছু টাকা সরকার ফেরত আনতেও সক্ষম হয়েছে।”

যাবজ্জীবন সাজা মাথায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা তারেক রহমানের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা নিজেরাই এখন দেখতে পারেন, তাদের জীবনযাত্রা, এই প্রবাসে থেকেও কীভাবে তারা চলে। তাদের সোর্স অব ইনকাম কী? অর্থ কোথা থেকে উপার্জন করে? তারেক জিয়াকে জিঞ্জেস করেন- কোথা থেকে অর্থ পায়? কীভাবে চলে? জনগণের সম্পদ লুট করে তারা বিলাসিতা করে।  

জাতির পিতাকে হত্যার পর তার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “সত্যকে কখনো ধামাচাপা দেওয়া যায় না।”