সরকার ভোটের মাঠ ‘খালি’ করতে চাইছে: ফখরুল

নির্বাচনী মাঠ ‘খালি করতে’ সরকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মামলায় বিএনপির নেতাদের ‘জড়াচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2021, 04:05 PM
Updated : 27 Oct 2021, 04:05 PM

বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “মন্দির ভাঙার ঘটনায় মামলা হয়েছে মোট ৬০টা। আসামির সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৬ জন। ইতোমধ্যে তারা (পুলিশ) গ্রেপ্তার করেছে বিএনপির ১৮৬৮ জনকে।

“এই ঘটনার পেছনে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ আছে এবং তারা শুধু তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করবার জন্যে, ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্যে এই জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে, সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে একটি দল কয়েকটি এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির-মণ্ডপ দেখে এসেছেন জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আমি যেটা বলতে বলতে চাই, বরকত উল্লাহ বুলুসহ ( বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান) যাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, এরা কেউ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না।

“এই মামলাগুলো করার একমাত্র উদ্দেশ্যে হচ্ছে বিএনপিকে হয়রানি করা, তাদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা এবং যেহেতু তারা আসন্ন নির্বাচন করতে চায়, সেই নির্বাচনের পূর্বেই যেন বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে মাঠ থেকে একদম সরিয়ে দেওয়া যায় মিথ্যা মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে… এজন্য এই ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ সব সময়ে এসব করে এসছে এবং এভাবে তারা রাজনীতিতে টিকে থাকতে চায়।”

দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ে একটি মন্দিরে ‘কোরআন অবমাননার’ কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।

এরপর চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী ও রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানিও হয়।

নোয়াখালীর ঘটনায় গ্রেপ্তার জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা ইতোমধ্যে আদালতে ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে বরকত উল্লা বুলুসহ ‘বিএনপি-জামায়াতের ১৫ নেতার সম্পৃক্ততার তথ্য’ এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মির্জা ফখরুল বলেন, “বরকত উল্লাহ বুলুর বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা এবং নির্যাতন করে যে স্বীকারোক্তি আদায় করা নেওয়া হয়েছে-এটা আমরা মনে করি যে, একটা মিথ্যা প্রয়াস বা বরকত উল্লাহ বুলু ও কামাক্ষা চন্দ্র দাসসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করার চেষ্টা এবং তাদেরকে আবার একটা আইনগতভাবে বিপদগ্রস্ত করার চেষ্টা।”

“আমরা অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহার চাই এবং প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার কথা বলছি, বিএনপির নেতা-কর্মী যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে ছেড়ে দিতে বলছি। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ী দোষী ব্যক্তি, তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।”

সরকার ‘পরিকল্পিতভাবে মাঠ পরিষ্কার করার কাজ করছে’ অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “গতবার ২০১৮ সালেও দেখেছেন আপনারা যে, নির্বাচনের ৭/৯/১০ দিন আগে থেকে এমনভাবে মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা শুরু হল, হাজার হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যেকটি নির্বাচনী আসনে; প্রার্থীদেরসহ, তাদের গ্রেপ্তার করা হল, যারা কর্মী মাঠে কাজ করছিলেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হল, বিএনপির সকল নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে মাঠ একদম খালি করা হল এবং আগের দিন রাতে ভোট করে নিয়ে যাওয়া হল।”

“এবার তার আগে থেকেই এই যে মামলাগুলো দিচ্ছে...। সরকার অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করতে চায়। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, আমাদের মামলাগুলো শেষ করে ফেলবে। তারা তালিকা তৈরি করেছে হোম মিনিস্ট্রি থেকে যে, মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পিত্তি করতে হবে এবং নেতারা ওই ইলেকশন যাতে করতে না পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।”

তবে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কোনো চিন্তাই করছে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই সরকারকে যেতে হবে এবং পদত্যাগ করে চলে যাওয়ার পরে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। দ্যাটস অল, ফাইনাল।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন উপস্থিত ছিলেন।