কিছু হলেই সরকার বিএনপিকে ‘জড়ায়’: ফখরুল

দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই ক্ষমতাসীনরা বিএনপিকে জড়ানোর চেষ্টায় ‘গল্প’ তৈরি করে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2021, 02:22 PM
Updated : 17 Oct 2021, 04:55 PM

দেশে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে তিনি বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনাসহ সারা দেশে মন্দিরে-মন্ডপে হামলা-ভাংচুরের ‘নিরপেক্ষ তদন্ত চায় বিএনপি।

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, যখন কোনো ঘটনা ঘটে তখন বিএনপিকে জড়িত করার চেষ্টা করে সরকার। সেজন্য কল্পিত স্টোরি তারা তৈরি করে। অথচ এই কাজটা তারাই করে।

“মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের এক নেতার সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে বলে একটি অডিও কল ভাইরাল করা হয়েছে। সরকার এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে।”

ফখরুল বলেন, “কণ্ঠ কাটপিস করে সুপার এডিটিংয়ের মাধ্যমে বানোয়াট ফোনালাপ ইতোমধ্যে অসংখ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্ট্য ব্যক্তিদের নামে ভাইরাল করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের মদদে একটি অসাধু মহল প্রতিনিয়ত এই হীন কাজগুলি সর্বক্ষণ করে যাচ্ছে। এই কাজগুলো করার জন্য এক লক্ষ লোককে হায়ার করা হয়েছে।

“আমান উল্লাহ আমানের ফোনালাপটি ভুয়া, বানোয়াট, অসত্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপার এডিটেড। আমি এই চক্রান্তমূলক ফোনালাপ ভাইরালের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের একটি মন্দিরে কথিত ‘কুরআন অবমাননার’ অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় মন্দিরে হামলা হয়, তাতে নিহত হয় অন্তত ছয়জন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা ইতোমধ্যে এর পেছনে বিএনপির জড়িত থাকার সন্দেহের কথা বলছেন। তবে বিএনপি মহাসচিব তা অস্বীকার করে তুলেছেন নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি।

“এইসব ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তি যারা রয়েছে, তাদেরকে সঠিক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।”

“একইসঙ্গে আমি দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি যে, সরকারের এই হীন প্রচেষ্টা যেন কোনোমতেই সফল না হয়, আমাদের বাংলাদেশের যে আত্মা সেই আত্মাকে কখনো যেন তারা বিনষ্ট না করতে পারে সেজন্য দেশবাসী সচেষ্টা থাকবেন।”

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, “শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা (ক্ষমতাসীন) উসকানি দিয়ে, মদদ দিয়ে আজকে আমাদের দেশে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সেই সম্প্রীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। আমরা এই প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দুর্গাপূজার প্রাক্কালে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আশ্বাস দেওয়ার পরও কেন…।

“কুমিল্লার সাধারণ মানুষের মত আমরাও একমত যে, পুলিশ বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিলে নানুয়া দিঘীর পাড়ের মণ্ডপের ঘটনাটি নির্মম অমানবিকতার দিকে গড়াত না। একই ঘটনা ঘটেছে চৌমুহনীতে। বার বার প্রশাসনকে বলার পরে, পুলিশ বাহিনীকে বলার পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।”

ফখরুল বলেন, “সরকারের মদদেই কুমিল্লার নানুয়ার দিঘীর পাড়ের পূজা মণ্ডপে চক্রান্তমূলক কুৎসিত কাজটি করা হয়েছে। এর বড় প্রমাণ ঘটনার পরপরই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা অতিসত্বর পূজা মণ্ডপ ও মন্দিরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাঠানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিল। কিন্ত স্থানীয় প্রশাসন এই অনুরোধে সাড়া না দিয়ে পুলিশ পাঠিয়েছে অনেক পরে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “চৌমুহনীতে বিভিন্ন মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে, সেখানে প্রায় ৭/৮ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। রাম পঞ্জিকা স্বর্ণের তৈরি, ওখানকার বিভিন্ন যে প্রতিমা আছে সেগুলো একদম স্বর্ণ দিয়ে তৈরি করা হয়…।”

হিন্দু-মুসলমান সবাইকে ‘সচেতন’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, এদেশের আলেম-ওলামাদের কাছেও আবেদন থাকবে, আপনারা এই সরকারের ফাঁদে পা না দিয়ে সংগঠিত হোন এবং আজকে এই ঘটনার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলন, কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়।” 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নোয়াখালীর সাবেক সাংসদ বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, “বৃটিশ আমল থেকে এই প্রথমবার চৌমুহনীতে মণ্ডপ-মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটল। একশ বছরে এরকম ঘটনার নজির নেই। আমরা আতঙ্কিত এই ঘটনায়।”

দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, “এই মন্দির-পূজামণ্ডপে হামলা নতুন কোনো ঘটনা নয়। আমরা দেখেছি রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহসহ সারাদেশে যেখানেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে এরকম পরিকল্পিত হামলা হয়, তার সাথে সরকারি দলের লোকজনই জড়িত।

“নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘর ভাংচুর করে মামলা হয়েছে, সেই মামলার চার্জশিটভুক্ত তিন আসামিকে তারা (আওয়ামী লীগ) ইউনিয়ন পরিষদে নমিনেশন দিয়েছে। সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর নির্যাতনের পেছনে ক্ষমতাসীনদের সম্পৃক্ততা দেখা গেছে।”

নোয়াখালীর চৌমুহনী পূজামণ্ডপের ভাংচুরের ঘটনা নিয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাশ বলেন, “চৌমুহনীতে একসাথে সাতটি মন্দির ভেঙেছে। একেকটা মন্দির ভাঙতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে, লুটপাট হয়েছে, অগ্নিসংযোগ হয়েছে। চৌমুহনী বাজারে বিজিবি ছিল, পুলিশ ছিল। তাদের ভূমিকা আমাদের মত, আপনাদের মত যেমন বসে আছি, দাঁড়িয়ে আছি- এরকম ছিল।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, গৌতম চক্রবর্তী, শামসুল আলম প্রামানিক, কামরুজ্জামান রতন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদসহ অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।