বড় হয়ে উঠেছে ‘আমলা লীগ’: মির্জা ফখরুল

প্রশাসনের কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের চেয়ে ‘বেশি ক্ষমতাধর হয়ে আমলা লীগ’ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2021, 08:33 AM
Updated : 12 Oct 2021, 08:33 AM

মঙ্গলবার দলীয় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এখন আওয়ামী লীগ কোথায়? এখন সমস্ত হচ্ছে আমলা লীগ। আপনারা যে যেখানে যাবেন দেখবেন ডিসি, এসপি, ওসি- এরা অনেক বড় সাহেব। ওদের (আওয়ামী লীগ) চাইতে অনেক বড়।

“ওরা নিজেরাই বলে মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ। ওরাই বলে না… এই যে অবস্থা তৈরি করেছে, এই অবস্থার জন্য শেখ হাসিনাকে, তার সরকারকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবি আবারও সামনে এনে ফখরুল বলেন, “আমাদের কথা খুব স্পষ্ট, অবশ্যই এদেশে একটা নির্বাচন হতে হবে এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের মতামত দেবেন।

“সেই নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। যাতে করে জনগণ ভোট দিতে যেতে পারে। যার ভোট সে দেবে, যাকে ইচ্ছা তাকে দেবে, সেই ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।”

ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দিকে ইংগিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে এনারা নির্বাচন কমিশন নিয়ে খুব মতামাতি করছেন। আরে সার্চ কমিটি, কিসের সার্চ কমিটি? এটা আপনার যাকে দেবেন তাকে দিয়ে করবেন তো? যাকে চাইবেন সেই হবে।”

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেন, “নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাহেব সত্য কথা কিছু বলেছেন। এখন তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম কথা বলছে এবং মানসিক রোগী বলছে। মানসিক রোগী তো আপনারা (সরকার) হয়ে বসে আছেন।”

সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “ঘর থেকে বের হন না। ওই যে এত কথা বলেন, তাদেরকে ঘর থেকে তো কোনোদিন বের হতে দেখি না। সব দেখি যে- কেউ গণভবনে, কেউ আপনার মন্ত্রীর বাসায়। সব তো ভেতরে বন্ধ হয়ে থেকে…।

“তাদেরকে বলব, আসেন, জনগণের সঙ্গে আসেন। একটা ভোট দেন, যে ভোটটাতে সবাই ভোট দিতে পারবে। জনগণের জন্য সেই অবস্থা তৈরি করেন। দেখেন, আপনারা কোথায় থাকেন? পালাবার পখও খুঁজে পাবেন না।”

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ফখরুল।  সারা দেশ থেকে কৃষক দলের জেলা প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর হাসান জাফির তুহিন ও শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে কৃষক দলের আংশিক কমিটি গঠনের পর এটি তাদের প্রথম সম্মেলন। দিনব্যাপী এ সম্মেলনে জেলা প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে কৃষক দলের সাবেক সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “কৃষক দলের সাথে আমি দীর্ঘদিন জড়িত ছিলাম। আমি এই দলের সাবেক নেতা শামসুজ্জামান দুদুসহ অন্যান্য যারা ছিলেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে তারা এই কৃষক দলকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করেছিলেন।”

নতুন নেতাদের কাছে প্রত্যাশা ‘অনেক বেশি’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একজন কৃষিবিদ আরেকজন ছাত্র নেতা- প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারি। আমরা আশা করব কৃষকদলকে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটা সংগঠনের পরিণত করবেন, গণ সংগঠনের পরিণত করবেন এই নতুন নেতৃবৃন্দ।

“এই দুঃসময়ে কৃষক দলকে সংগঠিত করে জনতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে… যে ভয়াবহ দানবীয় একটা পাথর আমাদের ওপর চেপে বসেছে, তাকে আমরা যেন সরাতে পারি এবং সত্যিকার অর্থে জনগণের একটা সরকার, জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করতে পারি।”

দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে মাঠ পর্যায়ে সফর করার জন্য নবগঠিত আংশিক কমিটির নেতাদের নির্দেশ দেন বিএনপি মহাসচিব।

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় এই প্রতিনিধি সম্মেলনে কৃষক দলের নবগঠিত কমিটির হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, গৌতম চক্রবর্তী, টিএস আইয়ুব,মোশাররফ হোসেন,শফিকুল ইসলাম প্রমখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।