আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি: আব্বাস

বর্তমান সরকারের ‘পদত্যাগ’ দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ‘ক্ষমতায় রেখে’ তার দল নির্বাচনে যাবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2021, 10:20 AM
Updated : 30 Sept 2021, 10:20 AM

সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ফেরানোর ‘সুযোগ নেই’ জানিয়ে কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেন আব্বাস।

তিনি বলেন, “কথা স্পষ্ট, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। আমরা ইতোপূর্বে কয়েকটা নির্বাচন দেখলাম, আপনারাও দেখেছেন।

“যে সরকার নির্বাচনের আগের দিন ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসে, বাক্স ভর্তি করে ফেলে, এরকম সরকারের অধীনে কীভাবে নির্বাচনে যাই? আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।”

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করলে তা ফিরিয়ে আনার দাবিতে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। কিন্তু আন্দোলনে সফল না হওয়ায় তাদের পরের পাঁচ বছর সংসদের বাইরে থাকতে হয়।

এরপর আওয়ামী লীগকে সরকারে রেখেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে পর পর দুটো জাতীয় নির্বাচন বর্জন করার সুযোগ তাদের ছিল না।

সেই নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়। আর বিপুল বিজয়ে টানা তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ এখন আগামী বছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলছে।

পরবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নেতারা আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে সরব হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ‘অগণতান্ত্রিক’ ওই পদ্ধতি বাংলাদেশে আর কখনো ফিরবে না।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মির্জা আব্বাস বলেন, “আওয়ামী লীগ এখন পদত্যাগ করুক। তারপরে যেভাবে দেশ চলে সেভাবে চলুক। কিন্তু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না।”

১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বিএনপির সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রথম উত্থাপন করেছিল জামায়াতে ইসলাম। অতঃপর আওয়ামী লীগ এটাকে টেকওভার করে।

“তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে আমাদেরকে আনতে বলে, আমরা নিয়ে এসেছিলাম। গণতন্ত্র শ্রদ্ধা করি বলেই আমরা সংবিধানে সংযোজন করেছিলাম। এখন উনারা বলেছেন সুযোগ নাই।”

সিইসি ‘ভুয়া লোক’

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা উচিত- প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জানাতে গিয়ে তাকে মির্জা আব্বাস বর্ণনা করেছেন একজন ‘ভুয়া লোক’ হিসেবে।

“এখন যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আছে ও তো একজন ভুয়া লোক। ওর কথার আমরা মূল্য দিই না। সবচেয়ে বড় কথা হল যে, এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন গঠন হতে পারে না, হবেও না। আমাদের কথা স্পষ্ট. এই সরকারেরে অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, “বিএনপি ইতোপূর্বে বহুবার দাবি আদায় করেছে। এবারও করবে। এটা সময়ের ব্যাপার।” 

‘আওয়ামী লীগ নাই, বিএনপি আসছে’

আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতা কে- ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা আব্বাস বলেন, “আমাদের দল সম্বন্ধে আওয়ামী লীগের না ভাবলেও চলবে।

“তাদের নিজের চরকায় তেল দিতে বলেন, কীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকবে সেই চিন্তা করতে বলেন। ওদের সরকারে থাকার সুযোগ আর নাই। দেশের মানুষের মু্খে মুখে কথা উঠে গেছে যে, আওয়ামী লীগ নাই, বিএনপি আসছে।”

জাতীয়তাবাদী উলামা দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে যান মির্জা আব্বাস।

উলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেছারুল হক ও সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবদুস সালাম এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন। কবর জিয়ারতের পর তারা মোনাজাতেও অংশ নেন।