শেখ হাসিনা: জীবন সংগ্রামের ৭৪ বছর অতিক্রম

সংগ্রামমুখর এক জীবনের চুয়াত্তর বছর পাড়ি দিলেন শেখ হাসিনা, যিনি কাণ্ডারি হয়ে বাংলাদেশ চালাচ্ছেন টানা এক যুগের বেশি সময় ধরে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2021, 06:18 PM
Updated : 27 Sept 2021, 06:18 PM

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়।

জাতির পিতার মেয়ে হয়েও তার জীবন যে কঠিন ছিল, তা ফুটে উঠেছে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদের বাণীতে।

তিনি বলেছেন, “জাতির পিতার কন্যা হওয়া সত্ত্বেও তার চলার পথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।”

বাঙালির জাতিকে মুক্তির পথে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুর পথচলায় তাকে পাকিস্তান সরকারের নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে বারবার। সেই প্রভাব পড়েছে পরিবারের উপরও।

স্বাধীন দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ট্রাজেডিতে সপরিবারে সবাইকে হারিয়ে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হছে শেখ হাসিনাকে।

দেশে ফেরার পরও ষড়যন্ত্র আর মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে, নেতৃত্ব দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে।

রাষ্ট্রপতির বাণীতে বলা হয়, “২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলাসহ বহুবার তার উপর হামলা হয়েছে। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতই প্রতিবার তাকে এসব বিপদ থেকে রক্ষা করেছে।”

তারপর ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে এখনও সেই পদে অধিষ্ঠিত আছেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের কারণেই বেশ কয়েক বছর ধরে (মহামারীর মধ্যে গত বছর বাদ দিয়ে) জন্মদিনটি বিদেশেই কাটাতে হচ্ছে শেখ হাসিনাকে। এবারও তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে।  

প্রিয় নেত্রীকে কাছে না পেলেও মঙ্গলবার তার জন্মের ৭৪তম বার্ষিকী নানা কর্মসূচিতে উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।

কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। একটি ই পোস্টার প্রকাশ করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।

বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, মন্দির গির্জা, প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজনও রয়েছে।

মহামারীর মধ্যে দিনটি উপলক্ষে দেশজুড়ে ৭৫ লাখ মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এদিন সারা দেশে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটি তিন দিনে সারা দেশে পঁচাত্তর হাজার গাছের চারা রোপণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিনটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসবমুখরভাবে উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ছাত্রলীগ আনন্দ শোভাযাত্রার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।

মুজিববর্ষের স্মারকগ্রন্থ ‘চিরঞ্জীব’ গ্রন্থের মোড়ক ঊন্মোচনে শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

রাজনীতিবিদের ঘরে জন্ম নেওয়া শেখ হাসিনার বেড়ে ওঠা পুরোপুরি রাজনৈতিক আবহে। ষাটের দশকে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে তার রাজনৈতিক অঙ্গনে পথচলার শুরু। ১৯৬৬-৬৭ সালে ইডেন কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার আগেই শেখ হাসিনার বিয়ে হয় পরমাণু বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে। তাদের দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা হোসেন পুতুল।

কাজের মধ্যে কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্য যখন সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে, তখন স্বামীর কর্মসূত্রে ইউরোপে ছিলেন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে থাকা ছোট বোন শেখ রেহানাও প্রাণে বেঁচে যান। ওয়াজেদ মিয়া তখন থাকতেন জার্মানিতে, ১৫ অগাস্ট তারা বেলজিয়ামে গিয়েছিলেন বেড়াতে।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সময় দেশে ফিরতে পারেননি শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে দলীয় সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তারপর এথনও সেই পদে রয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা।

১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনা। সংগৃহীত ছবি

সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করেন শেখ হাসিনা; যার ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে পতন ঘটে এরশাদের, জয়ী হয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে গঠিত সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৬ সালে প্রথম দেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা।

এরপর তার নেতৃত্বে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের ভোটে জেতে আওয়ামী লীগ। এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে তিনি।

জাপানে জি-সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার পথরেখা তৈরির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, “তিনি দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এবং দেশের জন্য বয়ে এনেছেন বিরল সম্মান।

“দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি রূপকল্প ‘ভিশন ২০২১’ এর সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচিসহ বাংলাদেশ ব-দ্বীব মহাপরিকল্পনা (ডেল্টা প্লান ২১০০) গ্রহণ করেছেন।”

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, “জাতির পিতা আমৃত্যু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখে গেছেন, তার কন্যার সুদক্ষ হাতেই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ন স্বচক্ষে দেখে যাওয়ার এবং তার অংশীদার হওয়ার বিরল সুযোগ আমরা পেয়েছি।

“শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মতোই গণমানুষের নেতা। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে শুধু দেশেই নন, বহির্বিশ্বেও তিনি অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।”