আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতা কে, জানতে চান কাদের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতা কে হবেন, তা জানতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2021, 09:28 AM
Updated : 27 Sept 2021, 10:22 AM

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “প্রশ্ন করতে চাই এবং বলতে চাই। আগামী নির্বাচনে আপনাদের নেতা কে? আন্দোলনে আপনাদের নেতা কে? কাকে ঘিরে আন্দোলন করবেন? কাকে ঘিরে সরকার গঠন করবেন? আমরা বলে দিচ্ছি, আমাদের নেতা হচ্ছেন শেখ হাসিনা।"

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার দলীয় কার্যালয়ে কৃষি ও সমবায় উপ-কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন কাদের।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডিকে (রব) নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি নতুন জোট গড়ে।

বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। আর তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। যাবজ্জীবন সাজা মাথায় নিয়ে তিনি থাকছেন লন্ডনে।

২০১৮ সালের ওই নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন। তবে তিনি নিজেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।

ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জোট বাঁধা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন- সেই প্রশ্ন তখনও রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শেষ পর্যন্ত ওই নির্বাচনে বিপুল বিজয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট সব মিলিয়ে পায় মাত্র সাতটি আসন।

বিএনপির অবস্থা এবারও বদলায়নি। খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে সরকার তাকে সাময়িক মুক্তি দিলেও আইন অনুযায়ী তার আগামী বছরের শেষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। তারেক রহমান এখনও দেশে ফেরেননি। জোট হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেরও আর কোনো বাস্তব কর্মকাণ্ড নেই।

সোমবারের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, “শেখ হাসিনার বিকল্প একজন নেতা আপনারা (বিএনপি) দেখান। একজনকে দেখাবেন। পলাতক, দণ্ডিত আসামি। তিনি আপনাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? এটা কি বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে? মানুষ এত বোকা নয়। মানুষ জানে বিএনপিকে ভোট দিয়ে লাভ নাই।

“বিএনপি আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য বিভিন্ন দলকে ডাক দিয়েছে। গতবারও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটা ঐক্য করেছিলেন। সেই ঐক্যের ফলাফলও এই দেশের মানুষ দেখেছে।”

আগামী বছর নির্বাচনের আগে যখন একে একে সরকারের ‘মেগা প্রকল্পগুলোর’ উদ্বোধন হবে, তখন বিএনপি ‘চোখে সর্ষে ফুল দেখবে’ বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী কাদের।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতি বড় জটিল। মানুষ এখন উন্নয়ন চায়। মানুষ এখন চরিত্রবান লোককে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তিনি হলেন একমাত্র শেখ হাসিনা।”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “কর্মীরা অনেকেই বলেন মূল্যায়ন হয়নি, কিছু পাইনি। এই ধরনের হাহাকার শুনতে পাই। একটু বঙ্গবন্ধু পরিবারের দিকে চেয়ে দেখুন। বঙ্গবন্ধু যখন জেলে ছিলেন, কীভাবে এই পরিবার চলেছে? কীভাবে বেগম মুজিব একটা পরিবারকে আগলে রেখেছেন? সেই ইতিহাস পড়ুন। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। সততার রাজনীতির বিরল দৃষ্টান্ত বঙ্গবন্ধুর পরিবার। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।

“শেখ হাসিনা ছেলেমেয়েদের দিয়ে বিকল্প কোনো পাওয়ার হাউস বা হাওয়া ভবন নির্মাণ করেননি। তিনি তাদের জ্ঞানে গরিমায়, মেধায়-পড়াশোনায় সমৃদ্ধ করেছেন।”

কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আমি বলব- হাহাকার করছেন কেন? বাংলাদেশে এখন উপার্জনের, বেঁচে থাকার অনেক পথ। অনেক দুয়ার শেখ হাসিনা খুলে দিয়েছেন। টাকা-পয়সার দিকে চোখ দিয়ে লাভ নেই। বঙ্গবন্ধু পরিবারের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করুন। নেত্রীর দিকে তাকান। টাকা পয়সা সম্পদের দিকে তাকাবেন না।

“আমার অবাক লাগে, কিছু কিছু মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। শুধু টাকা আর টাকা। সম্পদ আর সম্পদ। দেশে সম্পদ, বিদেশে সম্পদ। এদের এই বেপরোয়া লোভ লালসার যেন কোনো শেষ নেই। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, জীবন উপভোগের জন্য এদের আর কত টাকা দরকার? কত সম্পদের দরকার?”

সবাইকে আদর্শের রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, “বেঁচে থাকার জন্য টাকা ও সম্পদ বানানোর প্রয়োজন নেই। দুনিয়া থেকে চলে গেলে এগুলো কে খাবে? এত টাকা এত সম্পদের কী প্রয়োজন? মিনিমাম যেটুকু প্রয়োজন সচ্ছলতার জন্য, সেইটুকু অর্জন করেন।” 

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার সততা থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানান কাদের। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বহু গরিব মানুষ শেখ হাসিনার সাহায্যে চলে। বহু অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন।

“এই দেশের রাজনীতিতে পঁচাত্তর পরবর্তীকালে সবচেয়ে ঝুঁকিময় জীবন, যে রাজনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। বারে বারে ষড়যন্ত্রের রাজনীতির শিকার তিনি হয়েছেন। তার জীবনের ওপর বারে বারে আঘাত করা হয়েছিল। অন্তত ২০ বার হত্যার চেষ্টা হয়েছিল।”

এখনও ‘ষড়যন্ত্রের বুলেট’ শেখ হাসিনার পিছু ছাড়েনি মন্তব্য করে কাদের বলেন, “কিন্তু শেখ হাসিনা ভয়কে জয় করেছেন। পিতা বঙ্গবন্ধুর মত ভয়কে জয় করে, স্মিতহাস্যে সকল ষড়যন্ত্র মাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন অকুতোভয়।”

আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় উপ-কমিটির চেয়ারম্যান মির্জা আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ফরিদুন্নাহার লাইলীর পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আলোচনায় অংশ নেন।